চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘যাত্রী পেটাও’ সংগঠন!

আল-আমিন সিকদার

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৪:১১ অপরাহ্ণ

উঠা-নামা ২০, উঠা-নামা ২০। বিকেল গড়ালেই নগরীর ইপিজেড মোড়ে যাত্রীদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোর হেলপাররা চিৎকার করতে থাকেন এ কথাগুলো বলে। যাত্রীদের অনেকেই হেলপারের বলা এ টাকার অংক না শুনেই উঠে পড়েন বাসে। পরে অবশ্য ভাড়ার কথা শুনে হেলপারের সাথে শুরু করে দেন ঝগড়া। অবশ্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করলে যাত্রীদের প্রতিবাদ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ প্রতিবাদ করতে গিয়ে এখন প্রতিনিয়ত চালক-হেলপারদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। আর এখন থেকে তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, গণপরিবহনের চালক-হেলপাররা এরইমধ্যে তাদের নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেছে। যাদের মূল কাজই হচ্ছে প্রতিবাদ করলেই যাত্রীকে ঘিরে ফেলা এবং সংগঠনটির বাকি সদস্যদের ডেকে এনে মারধর করা।
সম্প্রতি নগরীর ইপিজেড মোড়ে সংগঠনটি বেশ মাথা-নাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই এখানে বাসের চালক-হেলপারদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে যাত্রীরা। কারণ, এ মোড়টি থেকেই শুরু হয় ভাড়া বাড়ানোর কার্যক্রম। যা নিয়ে প্রতিবাদ জানালেই যাত্রীদের ঘিরে ধরে করা হয় মারধর। শুধু তাই নয়, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও একজোট হয়ে রাস্তা অবরোধ করে দেন তারা। গত শুক্রবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা একটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে এমনই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন ইপিজেড মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মুসা।
গত শুক্রবার বিকেলে ইপিজেড মোড়ে বাস থেকে নেমে যেতে দেখা যায় দুই নারী যাত্রীকে। তাদের কাছ থেকে বাস থেকে নামার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান অতিরিক্ত ভাড়ার কথা। বিষয়টি নিয়ে পার্শ্ববর্তী ট্রাফিক বক্সে অভিযোগ জানানো হলে ট্রাফিক সার্জেন্ট মুসা বাসটি আটকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একটি মামলা দেন। মামলা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রাফিক বক্সের সামনে জড়ো হতে থাকেন চালক-হেলপাররা। একপর্যায়ে মামলা তুলে নিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন তারা। এজন্য তাদের প্রায় শতাধিক সদস্য প্রায় ২০ মিনিটের মত অবরোধ করে ইপিজেড মোড়ে। বন্ধ করে দেয় গণপরিবহন। পরে উপস্থিত সার্জেন্ট মুসার দেয়া কোন এক আশ্বাসে ফের ভরসা রেখে অবরোধ তুলে নেয় চালকরা। শুধু তাই নয়, বিষয়টির ওপর তথ্য সংগ্রহ করার সময় প্রতিবেদকের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায় উপস্থিত চালক-হেলপাররা।
এ বিষয়ে সার্জেন্ট মুসা পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা মামলা দেয়ার পর তারা উত্তেজিত হয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের এর পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে জানালে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়িটি মামলা দেয়ার সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট ও প্রতিবেদককে ঘিরে ধরা এবং সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দেন মো. মিজান ও মো. ইব্রাহিম নামে দুই মোটরযান শ্রমিক। মূলত, গণপরিবহনের লাইনম্যানগুলোর সাথে পুলিশ সদস্যদের অনৈতিক লেনদেন থাকার সুবাদে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠছে তারা।
শুধু এ ঘটনাই নয়, তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে মাত্র এক টাকার জন্য হেলপারের ধাক্কায় চলন্ত বাস থেকে পরে প্রাণ হারান এক যাত্রী। গত সোমবার দুপুরেও নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে ৬ নম্বর রুটে চলাচলকারী একটি বাসের দুই হেলপারের নির্যাতনের শিকার হন এক দম্পতি। তাদের মেরে রক্তাক্ত করা হয় বলে জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রবিউল হোসেন রবি নামে এক ব্যক্তি। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভাড়া বেশি রাখার প্রতিবাদ করায় এক যাত্রীকে তার স্ত্রীর সামনেই মারধর করে বাসের দুই হেলপার। তাকে এতটাই আঘাত করা হয় যে তার মুখ ফেটে রক্ত বের হয়। পরে তাকে নামিয়ে দিয়ে বাস চালিয়ে চলে যায় তারা। মূলত, এখন তারা যাত্রী পেটাও নামে একটি সংগঠন বানিয়ে ফেলেছে। কেউ ভাড়া নিয়ে প্রতিবাদ করলেই একজোট হয়ে মারধর করে তারা।’
এ বিষয়ে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়–য়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘যাত্রীদের মারধরের ঘটনায় এ পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেননি। তবুও বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। যদি এমন কোন কিছু পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট