চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা

মিশ্র প্রতিক্রিয়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের

অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা

ইমরান বিন ছবুর

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৪:১০ অপরাহ্ণ

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। এসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হবে কিনা বা হলে কিভাবে হবে সে সম্পর্কে এখনো কোন ধারণা নেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। মার্চ পর্যন্ত স্কুলের ক্লাস, সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইন ক্লাসের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। শহরের শিক্ষার্থীরা সংসদ টিভি ও অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পেলেও গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর এসব সুবিধা ছিল না বলে জানা যায়।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে স্মার্ট ফোন বা ইন্টারনেটের সুবিধা না থাকায় তারা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এছাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের একটি অংশ সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোন ও কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুরোধ করেন।

আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ ও সাদিয়া আক্তারে কাছ থেকে অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলে, প্রথম প্রথম সংসদ টিভিতে ক্লাস দেখলেও পরে আর দেখা হয় না। কেন দেখা হয় না জানতে চাইলে তারা বলে, সংসদ টিভিতে কোন টপিক না বুঝলে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না। তাই আর দেখি না।

অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে জানতে চাইলে এসব শিক্ষার্থী জানায়, বাড়িতে স্মার্ট ফোন না থাকায় তারা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এছাড়া, সম্প্রতি স্কুলেও অনলাইন ক্লাস চালু করেছে বলে জানায় তারা।

পটিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হক মিজান জানান, প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ক্লাস ভিডিও করে শিক্ষকরা ফেসবুকে আপলোড দেন। কিছু কিছু শিক্ষার্থী তা দেখে। অনেকেই না বুঝলে পরে ফোন করে জেনে নেয়।

জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়ার পাড়া চারপির আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওসমান গণি বলেন, সংসদ টিভি ও জেলা প্রশাসনের ক্লাস রুটিন আমরা শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি, জেলা প্রশাসনের অনলাইন ক্লাস করার জন্য। স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় সবাই হয়তো অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে না।

জানতে চাইলে বোয়ালখালীর মো. আলমগীর নামে এক অভিভাবক বলেন, সংসদ টিভি কিংবা অনলাইনে ক্লাস প্রচারিত হলেও অধিকাংশ গ্রামের শিক্ষার্থী তা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কারণ গ্রামে ইন্টারনেটের ধীরগতি, স্মার্ট ফোনের অভাব, প্রত্যন্ত এলাকার গরিব শিক্ষার্থীদের বাসায় টেলিভিশন না থাকা এবং ইন্টারনেট খরচের কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া অনলাইন পাঠগুলো দেখতে হলে প্রচুর ইন্টারনেট ডাটার প্রয়োজন হয়। অনেক গরিব অভিভাবকের পক্ষে প্রতিদিন ডাটা কিনে সন্তানকে অনলাইন ক্লাস দেখার ব্যবস্থা করে দেয়াও সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ জানান, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হবে না। তবে স্ব স্ব স্কুলে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হবে। মার্চ পর্যন্ত ক্লাস, সংসদ টিভি, অনলাইন ক্লাসের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেয়া হবে। এছাড়া, এরমধ্যে যদি স্কুল খুলে ক্লাস নেয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে এর উপরও মূল্যায়ন করা হবে। মূলত এ চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেয়া হবে।

গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, গ্রামের কোন স্কুলে কতটুকু পড়াশুনা হয়েছে, এটা সে স্কুলের শিক্ষকরা অবশ্যই জানবেন। এছাড়া ওই এলাকায় সংসদ টিভি ও অনলাইন ক্লাসের কতটুকু সুবিধা ছিল, এটাও শিক্ষকদের জানার কথা। এসবের উপর ভিত্তি করে স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা নেয়া হবে।

চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন জানান, করোনার প্রভাবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়েছে। এর কিছুদিন পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চলমান রাখতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপরও অষ্টম শ্রেণিতে কিভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে, শিক্ষাবিদরা সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। হয়তো সব বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে না। শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা নেয়া হবে।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট