চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সওজের শর্ত মানছে না ওয়াসা

নাজিম মুহাম্মদ

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:৩১ অপরাহ্ণ

শর্ত ভেঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতটি মহাসড়কের পাশে মাটি কেটে পানির পাইপ স্থাপন করছে ওয়াসা। এতে এসব সড়কে যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ কথা ছিলো সড়ক থেকে ১০০ ফুট দূরে মাটি না কেটে মেশিনের মাধ্যমে পাইপ স্থাপন করা হবে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বাদামতল থেকে পটিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে সড়ক দেবে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে সড়ক প্রশস্ত করতে গেলে মাটির নিচে স্থাপন করা এসব পাইপের অবস্থান হবে সড়কের মাঝখানে। সড়ক নষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ না করার ১৭টি লিখিত শর্তে পাইপ লাইন স্থাপন করার কথা থাকলেও তা মানছে না ওয়াসা।
পাইপ স্থাপনে অনিয়মের কথা জানিয়ে সওজ একাধিকবার লিখিতভাবে জানালে তাও কানে নিচ্ছে না ওয়াসা। সড়ক নষ্ট না করে এইচডিডি (হরিজনটাল ডাইরেকশনাল ড্রিলিং বা মাটি না কেটে মেশিনের মাধ্যমে পাইপ বসানো) পদ্ধতিতে পাইপলাইন স্থাপনের কথা থাকলেও তা না করে ওপেন পিট পদ্ধতিতে স্বল্প গভীরতায় মাটি কেটে পাইপ বসানোর কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ সাতটি সড়ক। এ বিষয়ে ওয়াসার বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছে সওজ। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
যে সাতটি সড়কে পাইপ বসানোর কাজ চলছে তা হলো, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাইজ্জ্যারটেক-শিকলবাহা-পটিয়া উপজেলা পর্যন্ত, কালাবিবির দিঘি থেকে সাদমুসা আনোয়ারা হেড কোয়ার্টার, শিকলবাহা থেকে কালাবিবির দিঘি, পাচুরিয়া থেকে মইজ্জ্যারটেক, শাকপুরা থেকে পাচুরিয়া, আহলে দরবার কালাইয়ার হাট থেকে কানুনগো পাড়া ও কানুনগো পাড়া থেকে বুড়া মসজিদ সড়ক।
এ ব্যাপারে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, সড়কের ডানদিকে শেষ প্রান্তে মাটি না কেটে সড়ক থেকে ১০০ ফুট দূরে পাইপ লাইন স্থাপনের কথা রয়েছে চুক্তিতে। কিন্তু তা মানছে না ওয়াসা। সড়ক কেটে পাইপ বসানোর কারণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন অংশ দেবে যাচ্ছে।
সড়কের পাশে মাটি কেটে পাইপ লাইন বসাতে ওয়াসার সাথে সড়ক ও জনপদ বিভাগের ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির দুই নম্বর শর্তে বলা হয়েছে মহাসড়ক সমূহের রাস্তার ডানদিকের (রাইট ওফ ওয়ে) শেষ প্রান্ত বরাবর সওজ কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন ও নক্সা মোতাবেক ওয়াসা কর্তৃক ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন প্রয়োজন অনুযায়ী ২০০ থেকে ৯০০ মিলিমিটার মাটি না কেটে পাইপ স্থাপন করতে হবে।
সাত নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, মহাসড়কের পাকা অংশ কেটে বা সোল্ডার কেটে কোন অবস্থাতেই পানির পাইপ লাইন স্থাপন করা যাবে না। সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬০ মিটারের কম মাটি খনন করা যাবে না।
১১ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, বর্ষাকালে পানির পাইপ লাইন স্থাপন করা যাবে না।
১৩ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, পাইপলাইন স্থাপনকালে এলাইনমেন্টে বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজ দায়িত্বে অপসারণ করবে ওয়াসা। অপসারণের ব্যয়ভার ওয়াসা বহন করবে।
সড়কের পাশে পাইপ লাইন বসানোর ক্ষেত্রে যে ১৭টি চুক্তি হয়েছে এর কোন একটি পূরণে ব্যর্থ হলে সড়ক জনপদ অধিদপ্তর বিনা নোটিশে ওয়াসার সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল ও হাইওয়ে এ্যাক্ট-১৯২৫ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার অধিকার সংরক্ষণ করে। ২ ও ৭ নম্বর শর্ত বারবার ভঙ্গ করার প্রেক্ষিতে দোহাজারী সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মাধ্যমে ইতিমধ্যে চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্ষাকালে পাইপ লাইনস্থাপন না করতে একাধিকবার ওয়াসাকে অনুরোধ করা হলেও সড়কের ক্ষতি করে বৃষ্টিতে পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করছে। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২২ জানুয়ারি, ৭ জুলাই সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর এসব বিষয়গুলো নিয়ে লিখিতভাবে ভা-ালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালককে জানিয়েছে সওজ। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, চুক্তির শর্ত মেনে পাইপ লাইন বসাতে গেলে অনেকগুলো স্থাপনা সরাতে হবে। তা সম্ভব হচ্ছে না। কোথাও সড়ক কাটা হয়নি। সড়কের বাইরে কাটা হয়েছে। স্থাপনা থাকলে তা অপসারণ করে পাইপ স্থাপনের কথা চুক্তিতে থাকা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, চুক্তির শর্ত মেনে বাস্তবে কাজ করা কখনো সম্ভব নয়। আমরা শর্ত মেনে কাজ করার চেষ্টা করছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট