চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার হবেতো পরিকল্পিত নগরী!

ইমরান বিন ছবুর

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৫৬ অপরাহ্ণ

অবশেষে চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য আরো একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হচ্ছে। আধুনিক নগরীর জন্য ২১ বছরের নতুন মাস্টার প্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় পুরো নগরীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশদ সার্ভে হবে। ওই সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী তৈরি হবে ২০২০ থেকে ২০৪১ সালের ২১ বছরের চট্টগ্রাম শহরের নতুন মাস্টার প্ল্যান। এটি হচ্ছে সিডিএ’র তৃতীয় মাস্টার প্ল্যান। এর আগে ‘প্রিপারেশন অব স্ট্রাকচার মাস্টার প্ল্যান এন্ড ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ১৯৯৫’ নামে চট্টগ্রাম শহরের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে সিডিএ। যদিও একটি মাস্টারপ্ল্যানও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি।
এরই মধ্যে সার্ভে এবং পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কনসাল্টেন্ট নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে সিডিএ। এ কাজে ১১টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। দুই বছরব্যাপী কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা। সার্ভে কাজে ব্যবহার করা হবে আনম্যানড এরিয়াল ভেহিক্যাল (ইউএভি), লাইডার (সর্বাধুনিক ড্রোন), টেরেস্টারিয়াল লেজার স্ক্যানার (টি এল এস), স্টিরিও স্যাটেলাইট ইমেজসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এই ধরনের প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হবে বলে জানান মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক এবং সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী।
তিনি প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, মাস্টার প্ল্যান প্যাকেজে সর্বমোট ৬টি কম্পোনেন্ট থাকবে। এই প্ল্যানে রাখা হবে বন্যা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ সিস্টেম। থাকবে দীর্ঘমেয়াদী ট্রাফিক ও যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা। বৈশিক জলবায়ু বিবেচনা করে শহরকে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ রাখতে থাকবে সাসটেইনেবল এনভাইরনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান। এছাড়াও থাকবে স্ট্রাকচার প্ল্যান, একশন এরিয়া প্ল্যান এবং সাথে যুক্ত থাকবে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় সাধনের নির্দেশনামূলক প্ল্যান।
সিডিএ’র এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরো জানান, শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যাওয়ার জন্য কানেক্টিভিটি প্রয়োজন। এই কানেক্টিভিটি কীভাবে করা হবে, এটা কি ফ্লাইওভারের মাধ্যমে নাকি ব্রিজের মাধ্যমে করা হবে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করা যাবে সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে। এই মাস্টার প্ল্যানের সার্ভের মাধ্যমে শহরের সব ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে আনা হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ কোন কিছুই মাস্টার প্ল্যান থেকে বাদ যাবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাস্টার প্ল্যানের সার্ভের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের হোল্ডিং নম্বরসহ বিল্ডিংয়ের নাম চলে আসবে। এছাড়া, হ্যারিটেইজ ভবনের ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক প্রতিবেদন থাকবে সার্ভে রিপোর্টে। এছাড়া, পুরো শহরের থ্রি ডি চিত্র তৈরি করা হবে।
সার্ভে কাজ চলাকালে মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পে জনগণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান জানান, মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে স্থানীয়দের নিয়ে ৪১টি কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়াও, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ও স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে এবং তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, মাস্টার প্ল্যানের সার্ভের কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, সম্পূর্ণ সার্ভে করা হয় না। এবার সার্ভের জন্য ড্রোন ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ফলে সম্পূর্ণ নগরী সার্ভের আওতায় আনা হবে। সার্ভে অনুযায়ী যেখানে কমার্শিয়াল স্পেসের প্রয়োজন, সেখানে কমার্শিয়াল স্পেস রাখা হবে। পূর্বের মাস্টার প্ল্যানে অনেক ওপেন স্পেস রাখা উচিত ছিল, যা সম্ভব হয়নি।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, মাস্টার প্ল্যানের কাজ দেখভাল করার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৮ সদস্যের একটি শক্তিশালী গঠন করা হয়েছে। যেখানে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও চট্টগ্রামে ক্রিয়াশীল সকল সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং জনপ্রতিনিধি। সকল স্থরের মতামতের সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী মাস্টার প্ল্যান চট্টগ্রামের জনগণ অচিরেই দেখতে পাবে এবং এর ফল ভোগ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পিইসি সভায় কিছু বিষয় সংশোধনসাপেক্ষে অনুমোদন লাভ করে। এর প্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয়ে সংশোধন করে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২১ মে সংশোধিত ডিপিপি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়, যা উক্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয় এবং ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বেশকিছু বিষয় যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে।
এর আগে নব্বইয়ের দশকে ‘প্রিপারেশন অব স্ট্রাকচার মাস্টার প্ল্যান এন্ড ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ১৯৯৫’ নামে চট্টগ্রাম শহরের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল। যা ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর গণশুনানির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৯ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চূড়ান্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ১৯৯৫ হতে ২০১৫ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নকাল তিন ধাপে ভাগ করা হয় স্বল্পমেয়াদী ১৯৯৫ হতে ২০০০, মধ্যমমেয়াদী ২০০০ হতে ২০০৫ এবং দীর্ঘমেয়াদী ২০০৫ হতে ২০১৫।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট