চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আজ বিশ্ব নদী দিবস

কর্ণফুলী-হালদার কান্না থামাবে কে

মোহাম্মদ আলী

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:৫১ অপরাহ্ণ

ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজের ওপর চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রণীত মাস্টার প্ল্যানের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে প্রতিদিন তরল বর্জ্য জমা হয় ৩৩ কোটি ১০ লাখ লিটার। এসব তরল বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এছাড়া নগরীতে দৈনিক প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য হয়। এসব বর্জ্যরে একটি অংশও নদীতে গিয়ে পড়ছে। নগরীর তরল ও কঠিন বর্জ্য ছাড়াও নদীর দুই ধারের শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যালও হালদা ও কর্ণফুলী গিয়ে পড়ছে। এ কারণে ক্রমাগত দূষণের শিকার হচ্ছে এ দুইটি নদী। কিন্তু নদী দূষণরোধে কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি। এতে হুমকির মুখে ওয়াসার সুপেয় পানি ও মৎস্য সম্পদ।
নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভাবনা তৈরি করতে আজ রবিবার আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস। আয়োজক সংস্থাগুলো করোনাকাল তথা কভিড-১৯, নদ-নদী ও পরিবেশের সুস্থতার সঙ্গে সুস্থ জীবনকে সম্পর্কিত করে স্থানীয়ভাবে একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে। আর এই প্রতিপাদ্যটি হলো ‘দূষণমুক্ত নদী=সুস্থ জীবন’।
বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করছে বিভিন্ন সংস্থা ও পরিবেশবাদী জোট। এর মধ্যে ১২টি সংস্থার যৌথ আয়োজনে এবার জাঁকজমকভাবে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংস্থাগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা নদী গবেষণাগার, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, রিভার বাংলা, দ্য ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এপেক্স ক্লাবস বাংলাদেশ, হালদা নদী রক্ষা কমিটি, জিবিএম বেসিন বেইজ্ড পিপলস নেটওয়ার্ক, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ এবং পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি।
ওয়াসা সূত্র জানান, নগরীতে বর্তমানে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এর মধ্যে গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয় মাত্র চার কোটি লিটার। অবশিষ্ট ৩২ কোটি লিটার পানি সরবরাহ হয় ভূ-উপরিস্থ প্রকল্পের মাধ্যমে। এর মধ্যে মোহরা শোধনাগার প্রকল্প থেকে ৯ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে ৯ কোটি লিটার এবং কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ১৪ কোটি লিটার। ভূ-উপরিস্থ প্রথম দুইটি প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পাড়ে। অপরদিকে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ-১ প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়েছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে রাঙ্গুনিয়া পোমরা এলাকায়। একই এলাকায় বর্তমানে আরো একটি প্রকল্প স্থাপন করছে ওয়াসা। এটির নামকরণ করা হয়েছে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প -২। এ প্রকল্প থেকেও দৈনিক আরো ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা হবে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে বোয়ালখালী উপজেলায় চলছে ভান্ডালজুরী পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্প থেকে দৈনিক উৎপাদন হবে ৬ কোটি লিটার। ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার দ্বিগুণ করা হলে হালদা থেকে উত্তোলন করা হবে আরো দৈনিক ৯ কোটি লিটার পানি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হালদা ও কর্ণফুলী নদী থেকে দৈনিক ৬১ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বামনশাহী খালের বর্জ্যে মরে যাওয়ার উপক্রম হালদা। নগরীর বিশাল এলাকার শিল্প ও আবাসিক বর্জ্য বামনশাহী, কৃষ্ণখালী, কুয়াইশ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদায় পড়ছে। এতে নদীর রুই জাতীয় মাছের প্রজনন বিরুপ প্রভাবের শিকার ছাড়াও ওয়াসার সুপেয় পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘শহরের ও শিল্পকারখানার বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণ হচ্ছে হালদা ও কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলী নদীর দু’পাশে কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। বিশেষ করে অক্সিজেন ও কূলগাঁও এলাকার শিল্পকারখানা ও আবাসিক বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে পড়ছে।’
ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮ কোটি ৮০ লাখ লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৫১ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। এছাড়াও নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ টন ফিক্যাল স্লাজ উৎপন্ন হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ ৭১৫ টনে উন্নীত হবে। নগরীতে কোন পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা এবং ফিক্যাল স্লাজ সংগ্রহ ও পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব পয়ঃবর্জ্য, শিল্প বর্জ্য ও হাসপাতাল বর্জ্য মূলত খাল ও নালা হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না হলে নগরীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস এ দুটো নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হবে। এতে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণসহ নগরীর সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট