চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় পর্যটন খাত

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

আল-আমিন সিকদার

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:১৫ অপরাহ্ণ

করোনার ধকল সামলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটন খাত। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ক্রমে সচল হচ্ছে। তবে করোনা সংকট না কাটায় পর্যটকদের আশানুরুপ উপস্থিতি নেই। ফলে এখনো লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। তাই তো বিশ্ব পর্যটন দিবসে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছেন।
আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। জাতিসংঘ পর্যটন সংস্থা ঘোষিত বিশ্ব পর্যটন দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন’। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তারা এ বছর বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন’কে অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। একই সাথে বিশ্ব দরবারে দেশের পর্যটন শিল্পকে কার্যকরভাবে তুলে ধরার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে বন্ধ করে দেয়া হয় সকল বিনোদন স্পট। সবশেষ দীর্ঘ ৫ মাস ৩ দিন পর ১৬ নির্দেশনা দিয়ে গত ২২ আগস্ট চট্টগ্রামের বিনোদন স্পটগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। ঘোষণার পরপরই খুলে দেয়া হয় নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, সিআরবি শিরিষতলা, ডিসিহিল, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, কর্ণফুলী ও কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক, জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘর, আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক, চান্দগাঁও স্বাধীনতা কমপ্লেক্সসহ সব বিনোদন কেন্দ্র। নগরীর মত একইসাথে খুলে দেয়া হয় চট্টগ্রামের কাপ্তাই, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারসহ অন্যান্য অঞ্চলের বিনোদন স্পটগুলোও। তবুও করেনার কারণে দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ থাকায় যেমন লোকসান হয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত বিনোদন স্পটগুলোর তেমনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা স্পটগুলোরও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউনের ৫ মাসে কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর। শুধু তাই নয়, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিনোদন স্পটগুলো খুলে দেয়ার পরও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় এখনও পর্যটকদের আনাগোনা হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কনকর্ড কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রামের জনপ্রিয় বিনোদন স্পট ফয়’স লেক গত ৫ মাসে ১০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক অভিজিৎ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ ছিল ফয়’স লেক। এতে করে আমাদের প্রায় ৮-১০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কারণ, প্রতিমাসে আমাদের স্টাফ বিল চালিয়ে যেতে হয়েছে। তাছাড়া এটার রক্ষাণাবেক্ষণেও প্রচুর টাকা খরচ হয় প্রতিমাসে। ভেবেছিলাম নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা বাড়বে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় পর্যটকরা এখনো ঘরবন্দী। তবুও বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বিশেষ অফার চালু করেছি আমরা। প্রবেশ মূল্যে দিয়েছে ১০০-২০০ টাকা ছাড়। অফারটি চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আশা করছি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে আমরা ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।’
করোনার কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্যুরিস্ট গ্রুপের সদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রামের পরিচিত একটি ট্যুরিস্ট গুপের নাম ‘চিটাগং ট্যুরিস্ট গ্যাং’। এ গ্রুপের এডমিন ওয়াফিউল হক পূর্বকোণ বলেন, ‘করোনার পূর্বে প্রতি সপ্তাহে আমরা দুটি করে ট্যুর দিতাম। একটি শর্ট ট্যুর, অন্যটি লং। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিনোদন স্পটগুলো খুলে দেয়ার পর আবারো ট্যুর দিচ্ছি। তবে পূর্বের তুলনায় এখন ট্যুরিস্টদের সংখ্যা কম। পূর্বে প্রতিটি ট্যুরে ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্য থাকলেও এখন হচ্ছে ১২-২০ জন।’
বিশ্ব পর্যটন দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করা হয়েছে।
কক্সবাজার: দীর্ঘ পাঁচ মাস কক্সবাজারের পর্যটন বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটকদের সেবায় কক্সবাজারে ৪৭০টি হোটেল-মোটেল, দুই হাজারের বেশি খাবারের দোকান, বার্মিজ মার্কেটসহ পর্যটন নির্ভর প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টের প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেড় শতাধিক ট্যুর অপারেটরসহ দেড় লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে এই ব্যবসায়ে জড়িত।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, করোনায় হাজারো কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়। এখনো ক্ষতিতে চলছে। করোনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তারপরও কিছু পর্যটক আসছে কক্সবাজারে।
বান্দরবান: বান্দরবানের সাতটি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় দেড়শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র, পাহাড়ের ঝরনা ও প্রাকৃতিক মনোরম স্থান রয়েছে। বান্দরবানের যেসব পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে জেলা প্রশাসন পরিচালিত শহরের কাছে নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক পাহাড়ের নীল দিগন্ত ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়া সেনাবাহিনী পরিচালিত চিম্বুক পাহাড়ের নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র। থানছি উপজেলায় বিজিবি পরিচালিত পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়া বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র ও প্রাকৃতিক মনোরম স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলা শহরের স্বর্ণমন্দির রামজাদি, রেইছা এলাকার রুপালি ঝর্ণা, সুয়ালক এলাকায় ম্রো ঝর্ণা, চিম্বুক সড়কের ফারুক পাড়া ঝর্ণা, শৈলপ্রপাত, রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুমসহ বেশকিছু স্পট। হোটেল-মোটেল রিসোর্ট রয়েছে ১২০টি। যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে গত ৫ মাসে করোনাকালীন সময়ে বান্দরবানে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ।
কাপ্তাই: শরতের এ সময়ে দেশি-বিদেশি হাজারও পর্যটকের আনাগোনায় কাপ্তাই মুখর থাকলেও করোনার প্রভাবে এখন তা শুধুই অতীত। গত ছয় মাস ‘প্যানোরমা জুম রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট’ ও ‘কাপ্তাই রিভার ভিউ পিকনিক স্পট ও রেস্টুরেন্ট’ খুলে দেয়া হলেও এখনো বন্ধ ‘প্রশান্তি পিকনিক স্পট এন্ড রেস্টুরেন্ট’, লেক ভিউ, লেক প্যারাডাইস, লেক শো রিসোর্ট। পাশাপাশি ৪ পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ খাতকে ঘিরে গড়ে উঠা শতাধিক কর্মসংস্থান বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় লোকসানের পরিমাণ ছাড়াবে ৫ কোটি টাকার উপরে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট