চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মাদকসেবী পুলিশের তালিকা হচ্ছে

নাজিম মুহাম্মদ

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:২৭ অপরাহ্ণ

মাদক সেবন করে সন্দেহভাজন এমন পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তালিকাভুক্ত পুলিশের এসব সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হবে। সিএমপির বিভিন্ন ইউনিটি ও বিভাগের পুলিশ সদস্যের ডোপটেস্ট (মাদক পরীক্ষা) করা হবে। ইতোমধ্যে মাদক সেবন করে সন্দেহভাজন এমন পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকাও তৈরি করেছে সিএমপি। সদ্য যোগ দেয়া সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর তিনি সিএমপিতে যোগ দেন। যোগদানের পর পরই পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, পুলিশের কোন সদস্য মাদক সেবন করে থাকলে তা যেন পরিহার করে। নিজের ডোপ টেস্ট করার মধ্য দিয়ে সন্দেহভাজন সিএমপির বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করার কথা বলেন। গতকাল (শনিবার) রাতে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, মাদক সেবন করে সন্দেহভাজন এমন (সিএমপির) পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। তালিকাভুক্তদের ‘ডোপটেস্ট’ করা হবে। টেস্টে কেউ মাদকাসক্ত প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ করা হচ্ছে। এরমধ্যে একশো জন পুলিশ সদস্যের ডোপটেস্ট করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৬ জন পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত বলে প্রমাণ পেয়েছে। গতকাল (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে ট্রাফিকের উপ-কমিশনারের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ডোপটেস্টে প্রমাণিত হওয়া ২৬ জন পুলিশ সদস্যের চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের বিশ্বাস তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য পরিষ্কার একটি বার্তা যাবে যে, এ ধরনের অপরাধে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রথম দফায় একশো জনের ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। একমাস পর আবারও বড় আকারে এ প্রক্রিয়া চালানো হবে। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ সন্দেহভাজন মনে হলে তাদেরও ডোপ টেস্ট করানো হবে। এক মাস সময় নিচ্ছি। কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়েও থাকে, সে যেন নিজে উদ্যোগ নিয়ে মাদক থেকে বের হয়ে আসে। শনাক্ত হওয়া পুলিশের ২৬ জন সদস্যের মধ্যে একজন সার্জেন্ট, চারজন এসআই, তিনজন এএসআই, একজন নায়েক ও ১৭ জন কনস্টেবল।
ডোপ টেস্টে ‘মাদকাসক্ত’ ধরা পড়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদরে চাকরিচ্যুত করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা ) বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি প্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে ডোপ টেস্টের জন্য। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই ডোপ টেস্টে মুখের লালা পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ সাত দিন, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ দুই মাস, চুল পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ ১২ মাস এবং স্প্যাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষার মাধ্যমে গত পাঁচ বছরের মধ্যে কেউ মাদক গ্রহণ করলেও তা পরীক্ষায় ধরা পড়বে। কিন্তু বর্তমানে শুধু ইউরিন (মূত্র) পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোন ব্যক্তি শেষ ১০ দিনের ভেতর কোন মাদক গ্রহণ করেছেন কিনা তা পরীক্ষায় ধরা পড়বে। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ডোপ টেস্টের ৯০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করা হয়। নন স্পেসিফিক পরীক্ষার জন্য ৬০০ টাকা (যার মধ্যে বেঞ্জোডায়াজেপিন, এমফেটামাইনস, অফিয়েটস ও কেননাবিনেয়েডস পরীক্ষাও রয়েছে) এবং এলকোহল পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। শুধু সরকারি চাকরি নয়, বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট