চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

র‌্যাবের হাতে ধরা ভয়ঙ্কর নারী প্রতারক

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক, কখনো ক্যাব সভাপতি, কখনো মানবাধিকারকর্মী, কখনো সাংবাদিক, কখনো এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, কখনো দেশি বিদেশি নিয়োগকারী সংস্থার মহাব্যবস্থাপক, কখনো আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী, কখনো পরিবেশবিদ।

এসব পরিচয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসার অভিযোগ উঠেছে পারভীন আক্তার (৫০) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘স্বীকৃতি’ নামক এক ভুয়া সংস্থা পরিচালনা করতেন পারভীন। ওই সংস্থায় নানাভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে। তারা সংস্থাপ্রধান ও তার নিয়োগ করা বিভিন্ন কর্মচারীর মিষ্টি কথায় ভুলে ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আশায় দৈনিক/সাপ্তাহিক/মাসিক ভিত্তিতে সংস্থাটিতে সঞ্চয় করেন। কিন্তু সঞ্চয়ের সীমা শেষ হয়ে গেলেও পারভীন আক্তার তাদেরকে মূল টাকা বা লাভ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পারভীন আক্তারের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তার কর্মচারীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলেও তাদেরকে চুরির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করতেন। এছাড়াও তিনি প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করতেন। কিন্তু সেগুলো আর ফেরত দিতেন না।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পাহাড়তলী থানার ডিটি রোড এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ভবনের (ইউনিয়ন ব্যাংক ভবন) ১০ম তলায় অবস্থিত “স্বীকৃতি” নামক ভুয়া সংস্থার অফিসে অভিযান চালিয়ে পারভীন আক্তার (৫০) নামে ওই ‘প্রতারককে’ গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৭’র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মামুন।

এসময় ওই অফিস এবং তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে সঞ্চয় ও ঋণ পাসবই, পূরণ করা চেক, স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও জমা বই, চুক্তিনামা, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা আদায়ের রশিদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সিল, স্বীকৃতি নামক সংস্থার ডেবিট ও ক্রেডিট ভাউচার বই, ফিক্সড ডিপোজিট রশিদ বই, অনুদান আদায়ের রশিদ বই, ক্যাশ পজিশন বই, প্যাড, বিদেশগমনের লিফলেট, বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, নিয়োগপত্র, লেজার বই, অঙ্গীকারনামা বই, মাসিক চাঁদা আদায়ের রশিদ, মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির বই, হিসাব খোলার বই, সাপ্তাহিক টপশিট, মাসিক সঞ্চয় আবেদন বই, প্রকল্প প্রস্তাব, আইডি কার্ড, ৪টি পাসপোর্ট,  গ্রেপ্তারকৃত আসামীর একটি ভুয়া এনআইডি কার্ডসহ আরো বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করে।

গ্রেপ্তার ওই নারী বিভিন্ন ভুয়া ও অবাস্তব প্রকল্প এবং সচেতনতা কার্যক্রম দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয়ে অনুদানের আবেদন করে থাকে। এছাড়াও সে ভূতুড়ে কার্যক্রম দেখিয়ে কিছুদিন আগে একটি মন্ত্রণালয়ে ৬কোটি ৩৫ লক্ষ ২৯ হাজার ৪’শ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছিল।

পারভীন আক্তারের  বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় এবং কোর্টে ১০টিরও বেশি প্রতারণা মামলা আছে বলে জানায় র‌্যাব। ২০১৪ সালে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সমবায় অধিদপ্তর স্বীকৃতি সংস্থাটির লাইসেন্স বাতিল করে। সে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে লাইসেন্সের আবেদন করলেও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য লাইসেন্স অনুমোদিত হয়নি। এরপরেও সে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড যেমন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায়, ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, হুমকি প্রদান করে চাঁদা আদায়, আইনি সহায়তা দেয়া, চাকরি দেয়া বা বিদেশ পাঠানোর নাম করে টাকা আদায়  ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। এই কর্মকাণ্ডের সাথে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে র‍্যাব।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট