চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৮ বছর পরও পূর্ণতা পায়নি বাকলিয়া স্টেডিয়াম ছবি: ইব্রাহিম মুরাদ

সীমানা প্রাচীরের মাঝে আবাসিক স্থাপনা

৮ বছর পরও পূর্ণতা পায়নি বাকলিয়া স্টেডিয়াম

মিটু বিভাস

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৫:৩৬ অপরাহ্ণ

বিশাল মাঠের মাঝখানে প্রকৃতির খেয়ালে গড়ে উঠা একখ- কাশফুলের বাগান। শরতের সকালে কংক্রিটের নগরীতে এমন অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়লে কার না ভাল লাগে। নগরীর বাকলিয়া স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে মাঠে চোখ পড়লেই আপনিও কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চাইবেন। লুসাই কন্যা কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে শাহ আমানত সেতুর পাশে ক্ষেতচর এলাকায় অবস্থিত এ স্টেডিয়ামের প্রবেশের পথে দাঁড়ালে চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। কিন্তু এরপরের অংশেই অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা এক মাঠের করুণ কাহিনী।

ফটকের ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে মাঠের সীমানা প্রাচীরের মাঝে বেশকিছু আবাসিক স্থাপনা, যারমধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে বেশ কয়েকটি পরিবার। ফটকের দুইপাশে অযত্নে অবহেলায় দাঁড়িয়ে থাকা দুটি গ্যালারি স্ট্যান্ড। দক্ষিণ পাশে আছে ভেঙে পড়া সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ। অথচ একটি আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন বিশ্বমানের স্টেডিয়াম গড়ার প্রত্যয় নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে ২০১২ সালে শুরু করেছিল এর নির্মাণ কাজ। দীর্ঘ আট বছরেও পরিপূর্ণতা পায়নি এ স্টেডিয়ামটি। এমনকি স্টেডিয়ামের পুরো জায়গাও নিজেদের দখলে আনতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন।

চট্টগ্রাম নগরীতে মাঠের সংকট দূর করতে চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল বাকলিয়া স্টেডিয়ামের। জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দকৃত পাঁচ একর জায়গার উপর এ স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র আলহাজ এম. মনজুর আলম। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই মাঠের চারপাশে গ্যালারিসহ খেলার মাঠের কার্যালয়, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, খেলোয়াড়দের বিশ্রামাগার, ভিআইপি গ্যালারি, প্রেসবক্সসহ তখন এ খেলার মাঠ তৈরিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছিল সিটি করপোরেশন।

স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে এমন প্রতিশ্রুতি রেখে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। যার মধ্যে বালি দিয়ে মাঠ ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও উত্তর পাশে টিন শেডে দুটি গ্যালারি স্ট্যান্ড নির্মাণ করে চসিক। এরপর নতুন কোন বরাদ্দ না আসায় সেখানেই থমকে গেছে এর উন্নয়ন কার্যক্রম। মামলা জটিলতায় মাঠের ভেতরে যেসব আবাসিক স্থাপনা ছিল তাও উচ্ছেদ করতে পারেনি চসিক।

এরমধ্যে চসিক বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অনুষ্ঠানে মাঠটি ব্যবহারও করেছে। এছাড়া বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠানের ক্রিকেট কোচিংও করানো হয়। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাকলিয়া স্টেডিয়ামের পথচলা শুরু হয়েছিল এখনও তার কোনটায় পূরণ হয়নি। প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোন অগ্রগতি হয়নি। চসিকের সাবেক ক্রীড়া স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিলর হাজী মো. হারুনুর রশীদ স্বীকার করলেন সেটি।

তিনি জানান, সদিচ্ছা থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে বাকলিয়া স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে ২০১৪ সালে তৎকালীন ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে বাকলিয়া স্টেডিয়াম নির্মাণে মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবদি এ স্টেডিয়ামের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন বরাদ্দ আসেনি। ক্রমবর্ধমান নগরে অন্য সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মতো খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। কিন্তু নগরীতে মানুষ যেভাবে বাড়ছে সেভাবে খেলার মাঠ টিকে থাকছে না।

এ অবস্থায় বাকলিয়া স্টেডিয়ামটি ক্রীড়ামোদীদের হতাশার মাঝে আশার আলো দেখিয়েছিল। চসিক অর্থ সংকটে হয়তো এর উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি। যে স্থাপনাগুলো রয়েছে তারও যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ নেই। মাঠে গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ আর গ্যলারি স্ট্যান্ডগুলো যেন তাদের বিশ্রাম ঘর। সাথে আছে ভবঘুরেদের আড্ডা। অযত্নে অবহেলায় ভেঙে পড়েছে গ্যালারির বসার জন্য তৈরি করা পাকা ফ্লোর। এছাড়া প্রধান ফটকের দুই পাশে সীমানা প্রাচীরের বাইরের পুরো অংশটাই ভাঙারি ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকদের দখলে। স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে দারোয়ান থাকলেও সীমানা প্রাচীরের মাঝে থাকা বসতঘরের বাসিন্দাদের কারণে পুরোপুরি অরক্ষিত এ স্টেডিয়ামটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইল চসিকের এস্টেট অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, বাকলিয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে মোট ৬ একর জায়গা লিজ নেয় চসিক। এর মধ্যে ৪.৭৫ একর ভূমি হুকুম দখল করে চসিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ১.২৫ একর ভূমি মামলা থাকার কারণে হুকুম দখল করে দেয়া হয়নি। যার কারণে অদ্যাবদি বসবাসরত পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে চসিকের পক্ষ থেকে এ মামলা চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, চসিকের আইন বিভাগ চেষ্টা করছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা শেষ করে সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামাটি ব্যবহারের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট