চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ফ্রিজ-এসি’র গ্যাস সংকট

সারোয়ার আহমদ

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:২৯ অপরাহ্ণ

দেশে রেফ্রিজারেটর ও এয়ার-কন্ডিশন তৈরি ও মেরামতে ব্যবহৃত গ্যাস ‘আর-৪১০এ’ এর সংকট বাড়ছে। আমদানি প্রক্রিয়া সহজ না হলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে সংকট আরো বাড়বে বলে জানান আমদানিকারকেরা। দ্রুত নিরসনে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে বন্দর-কাস্টমস ও আমদানিকারকেরা এই গ্যাস আমদানির সহজ উপায় বের করার কথা ভাবছে।
মূলত এই সংকট শুরু হয় গত ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থিত বন্দরে বিপজ্জনক পণ্যের ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৯০ জন নিহত হওয়ার পর। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার দেশে বিপজ্জনক পণ্য আমদানিতে কিছু নির্দেশনা দেয়। যার কারণে সকল বিপজ্জনক পণ্য আমদানিতেই জটিলতা বাড়ে। বিশেষ করে রেফ্রিজারেটর ও এয়ার-কন্ডিশন তৈরি ও মেরামতে ব্যবহৃত গ্যাস ‘আর-৪১০এ’ এর সংকট চরম পর্যায়ে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার-কন্ডিশনিং মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের (ব্রামা) উপদেষ্টা মো. শফিকুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘লেবাননে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর পরপরই নারয়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে ঘটে আরেক দুর্ঘটনা। এসবের মধ্যে এসি ও রেফ্রিজারেটরের গ্যাস ‘আর-৪১০এ’ আমদানিতে আমরা জটিলতায় পড়ছি। এরই মধ্যে ২৫টি কার্গো ফেরত যাওয়া ‘আর-৪১০এ’ গ্যাসের সংকট বাড়ছে। আমদানি না হলে সংকট আরো বাড়বে’।
এই সংকট নিরসনে গত ৯ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় গত ২৭ আগস্ট থেকে বিপজ্জনক কার্গো বিবেচনার কারণে রেফ্রিজারেটর ও এয়ার-কন্ডিশনের গ্যাস ভর্তি ২৫টি কার্গো ফিরে গেছে। এর কারণে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এই সংকট নিরসনে একটি একটি ভার্চুয়াল সভা আয়োজনেরও অনুরোধ জানানো হয়।
জানা যায়, ৯ ধরনের বিপজ্জনক পণ্যের মধ্যে ৮ ধরনের পণ্য বন্দরে আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খালাস নেওয়া হবে এমন অঙ্গীকার দিয়ে ওইসব পণ্য আমদানি করতে হয়। এছাড়া বাকি এক ধরনের পণ্য অর্থাৎ ‘ক্লাস-২.২’ জাতীয় পণ্য সরাসরি ডেলিভারি নিতে হয়। আর ওই ‘ক্লাস-২.২’ পণ্যের মধ্যে পরে রেফ্রিজারেটর ও এয়ার-কন্ডিশন তৈরি ও মেরামতে ব্যবহৃত গ্যাস ‘আর-৪১০এ’। অর্থাৎ এই গ্যাস বন্দরে আসার সাথে সাথে স্টোর না করেই ডেলিভারি নিতে হবে এমন বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই গ্যাস বন্দরে আসার সাথে সাথে নেভি’র অনুমতি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি, কাস্টমসের এ্যসেসমেন্ট, বন্দরের খালাস পক্রিয়া সবকিছু শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিপজ্জনক পণ্য আমদানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, লেবাননের ঘটনার পর দেশে বিপজ্জনক কার্গো আমদানি নিয়ে আমদানিকারকসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলেই বিপাকে পড়েছে। কারণ এখন বিপজ্জনক পণ্য বন্দরে আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খালাস নেওয়া হবে এমন লিখিত পত্র দিয়ে আমদানি করতে হয়। কিন্তু তারপরে দেখা যায় একজন আমদানিকারকের নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট বাংলাদেশ নেভি’র নিয়োজিত দপ্তর থেকে বিপজ্জনক পণ্য খালাসের অনুমতি, বিস্ফোরক দপ্তর থেকে অনুমতি এবং বন্দর কাস্টমস থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে যে সময় লেগে যায় ততক্ষণে জাহাজ আর অপেক্ষা না করে চলে যায়। যার কারণে ওইসব পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই সংকট থেকে নিরসনে আমরা বন্দরের অভ্যন্তরে একটি নিরাপদ জায়গা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। যে জায়গায় প্রয়োজনীয় ফায়ার সার্ভিসসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে থেকেই করা থাকবে’।
বিপজ্জনক কার্গো (ডিজি কার্গো) খালাস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, ডিজি কার্গো আমদানি ও খালাস বিষয় নৌবাহিনীর নিয়োজিত দপ্তর ও কাস্টমস দেখভাল করেন। সেই সাথে বিস্ফোরক অধিদপ্তরও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট। তাই বন্দর একা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না’।
বিপজ্জনক কার্গো পণ্য খালাসের জটিলতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিপজ্জনক কার্গো আমদানি নতুন কিছু নয়। বিপজ্জনক বিবেচনা করলেতো মানুষের বাসা ও অফিস থেকে সব এসি খুলে ফেলতে হবে। বাসার ফ্রিজ বন্ধ করে দিতে হবে। এটা কোন সমাধান নয়। আমাদের নিরাপত্তা বাড়িয়ে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। কিন্তু কারখানার কাঁচামাল আমদানি বন্ধ করে দিলে কারখানাও বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে সহজ উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
দেশের বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি গ্রহণযোগ্য উপায় খুঁজে বের করাই সমাধান হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জহির পূর্বকোণকে বলেন, ‘বহির্বিশ্ব কীভাবে বিপজ্জনক কার্গো হ্যন্ডেল করে সেটি আমাদের দেখতে হবে। সে থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে দেশীয় ব্যবসা টিকে থাকবে। বাণিজ্য তরান্বিত হবে’।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট