চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না করলে কার্যাদেশ বাতিল করুন: সুজন

অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকে দেখবেন আরেক চট্টগ্রাম

ইফতেখারুল ইসলাম

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের সাথে নগর ভবন এবং বাইরে সারাদিন থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার প্রতিনিধি মো. হেফাজুর রশিদ। যুব সমাজ নিয়ে রয়েছে চসিক প্রশাসকের পরিকল্পনা এবং চিন্তা-ভাবনা। দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত আলোচনায় তা তুলে ধরা হয়েছে।
পূর্বকোণ : আপনার দায়িত্ব গ্রহণ একটি অন্তর্বর্তীকালের জন্য হলেও কিছু উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে। সামনের দিনগুলোতে কোন কোন কাজ আপনার অগ্রাধিকার তালিকায় প্রাধান্য পাবে ?
সুজন: মানুষ চায় শহরটা যেন বাসযোগ্য পরিচ্ছন্ন মানবিক হয়। দায়িত্ব নেয়ার সময় শহরের সব রাস্তা খানাখন্দে ভরা ছিল। দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পিসি রোড এবং স্ট্র্যান্ড রোডের অবস্থা ছিল বেহাল। আমার প্রথম দায়িত্ব হল সড়ক সংস্কার। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে গর্তে হোঁচট খেয়ে মন খারাপ করে যেন অফিসে না যায়। এই কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে ২০ ভাগ বাকি রয়েছে। কারণ বিটুমিনের কাজ বৃষ্টির সময় করা যায় না। আরেকটি লক্ষ্য হল পরিচ্ছন্ন শহর। তাতে ৭০ ভাগ সফল হয়েছি। রিয়াজ উদ্দিন বাজার এবং ফলমণ্ডিকে মডেল হিসেবে নিয়েছি। প্রতিটি দোকান সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে প্লাস্টিকের বস্তা কিনবে ২৫ টাকা দরে। তারা বস্তায় আবর্জনা রাখবে। আমার লোক বস্তা থেকে ময়লাগুলো নিয়ে বস্তাটি ফেরত দিবে। কেউ বাইরে ময়লা ফেললে জরিমানা করা হবে। অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকে আরেক চট্টগ্রাম দেখবেন।
পূর্বকোণ: আপনার যে নতুন উদ্যোগ সেগুলো যুবসমাজের জন্য কি পরিবর্তন আনতে পারে ?
সুজন : হেলাল হাফিজ লিখেছেন, “এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় । এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।” আমি বলব, এখন যৌবন যার তার শহরকে সুন্দর করে রাখার শ্রেষ্ঠ সময়। সেদিন কিছু যুবক আউটার স্টেডিয়াম পরিষ্কার করেছেন। এই মাঠ থেকে আকরাম, নান্নু, তামিমসহ অনেক খেলোয়াড় উঠে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ মাঠটির কি অবস্থা। তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে মাঠটি পরিষ্কার করেছে। যৌবনের সময়কে বিকশিত করার সুযোগ দিতে শহরে অন্তত তিনটা মাঠ করার স্বপ্ন আছে। আগ্রাবাদে মাল্টিডায়মেনশনাল মাঠ করার পরিকল্পনা আছে, যেখানে একসাথে একাধিক শিশু-কিশোরের দল খেলা খেলতে পারে। এই শহরের তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা দখল করে আছে বন্দর এবং রেলওয়ে। পাহাড়তলী জোড় ডেবা (হর্স শো) লেক। প্রায় ২০ একর জায়গা দখলদাররা ভোগ করছে। রেলমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারা যদি সিটি কর্পোরেশনকে লিজ দিলে সেখানে এমিউজমেন্ট পার্ক এবং খেলার মাঠ করে দেব। আগ্রাবাদ শিশু পার্কে এমিউজমেন্ট পার্ক এবং সাথে খেলার মাঠ করার ইচ্ছা আছে। আমি চাই শহরটা আনন্দময় শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের হোক।
পূর্বকোণ: নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনায়, কর্পোরেশনের বাজেট প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যুবদের সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে?
সুজন : এই শহরটা যাদের জন্য তাদের জন্য বাজেট না থাকলে হয় না। যেমন সিআরবি’র সুব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি। পরিবেশটা আরো সুন্দর করে দিতে পারি। স্বাধীনতা যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান যুবরাই করেছে। দেশের কায়েমি স্বার্থবাদীরা যুবকদের মাদক দিয়ে ঘুমিয়ে রাখতে চায়। আমি তাদের জন্য জাগরণের বাণী নিয়ে ৪১টি ওয়ার্ডে যাব। বলব জেগে উঠ। তোমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা কর। তোমার যৌবন সুন্দর, প্রেমময় এবং বর্ণিল। এটাকে সুন্দরভাবে উপভোগ কর। আর মা বাবাকে অনুরোধ করবো। স্টার জলসায় সময় না দিয়ে সন্তানের খোঁজ খবর নেন।
পূর্বকোণ : কর্পোরেশনের কার্যক্রমে যুবকরা যাতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে পারে, সেজন্য স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোতে যুবদের সম্পৃক্ত করার কোন সুযোগ আছে কি?
সুজন: যুবকরাই ঠিক করবে তাদের কাজ। কিছু যুবক ইচ্ছে করলে একটি জায়গা বেছে নিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করতে পারে। যারা সুন্দরের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানেই যুবকরা প্রতিরোধ করবে। শহরে কয়েকটি বার্ডস ফিডিং সেন্টার করবো। যুবরা সেখানে পাখিকে খাওয়াবে। আনন্দ করবে। সুন্দরের জন্য যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। যুবককালে নিজে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতাম। নোয়াপাড়া কলেজে মাটি কেটেছি।
এক সময় লিখতাম, ‘এমন এমন সকাল ছিল আমি ছিলাম ভোরের পাখি, এখন আমি জেগে উঠি গান গেয়ে যায় নাম না জানা কত রকম অচিন পাখি।’ আজ আমাদের ছেলেরা দিনের ১০টায়ও ঘুম থেকে উঠে না। ভোরের অপরূপ সৌন্দর্য পাখির গান সে উপভোগ করতে পারছে না। সুর্যোদয় দেখে না। সন্তানকে জাগিয়ে তুলুন। ধর্মীয় কাজ করে যেন ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। ‘এমন এমন দুপুর ছিল, আমি ছিলাম রেসের ঘোড়া, হাঁকে ডাকে মাতাল হত অলিগলি বস্তিপাড়া। এখন এমন নষ্ট দুপুর, রূপ কথার ওই ঘোড়ার সামনে মজে যাওয়া মস্ত বড় পদ্ম পুকুর।’ বাইক নিয়ে গোটা শহর দাপিয়ে বেড়াতাম। কোথায় মানুষের অসুবিধা হচ্ছে দেখেছি। আমাদের যুব সমাজ মানুষকে অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের পক্ষে আনার কাজে সম্পৃক্ত হতে পারে।
পূর্বকোণ: ছায়া নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন ও বড় দায়িত্ব গ্রহণে যুবদের উৎসাহিত করার একটা রেওয়াজ উন্নত বিশ্বে রয়েছে। আপনি কি মনে করেন সিটি করপোরেশন বা বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের উদ্যোগ প্রতিবছরই নিতে পারে?
সুজন: নিশ্চয়ই। দলগুলো ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের চেয়ে অরাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নে বেশি ব্যস্ত থাকে। ক্ষমতাসীন দলের কাজ হচ্ছে মানুষের সমস্যা সরকারের কাছে তুলে ধরা। আবার সরকারের অর্জনগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। এটা অনেকটা মানুষ এবং সরকারের মাঝে বিনীসুতার মালা গাঁথার মতই। বিরোধী দলে থাকলেও মানুষের সমস্যা সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। দল থেকে কোন কর্মসুচি নেয়া হলে তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে ছাত্রলীগের কাছে ছয়দফা পাঠিয়েছিলেন মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। তিন বছরে গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। সেখান থেকেই নেতৃত্ব বের হয়েছে। রাষ্ট্র, দায়িত্বশীল সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সবাই মিলে একটা সংসার। একজন যুবককে ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
পূর্বকোণ: যুবকদের জন্য আপনি কি বার্তা দিতে চান?
সুজন: যৌবন ক্ষণস্থায়ী। এটাকে সুন্দর, গঠনমূলক, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করতে হবে। আজকের যুবকরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রপ্রধান, বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক।
পূর্বকোণ : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
সুজন : দখলদার তুই রাস্তা ছাড়, রাস্তা কি তোর বাপ দাদার ? এই স্লোগান চালু করেছি। এই স্লোগানকে সবদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। ফুটপাত কি তোর বাপ দাদার? হকাররা আমার কাছে এসেছিল। হকাররা হল স্বউদ্যোগ কর্মসংস্থান। এখানে ব্যাংক বা রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নেই। শৃঙ্খলায় আসতে হবে। পথচারীদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। বিকাল ৩টায় আসবে সে একটা টুল নিয়ে আসবে, একটি হ্যাঙ্গারে তার জিনিস ঝুলাবে। রাত ৮টায় পণ্য নিয়ে চলে যাবে। এরপর আমি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করবো। ১৫ দিন সময় দিয়েছি। এরপর অভিযান শুরু হবে। অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকে আরেক চট্টগ্রাম দেখবেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট