চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আফ্রিকার পালমায় সন্ত্রাসীদের হাতে চট্টগ্রামের যুবক খুন

বাঁশখালী সংবাদদাতা

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৪:৫৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল মাঝর পাড়ার নুরুল ইসলাম (২৫) আফ্রিকার আবদুল গাদী প্রেম্বা প্রদেশের পালমার এলাকায় সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। ভারত মহাসাগর তীরবর্তী তানজানিয়া সীমান্ত এলাকা পালমায় নুরুল ইসলাম মুদির দোকান করতেন।

তিনি চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হোছন আহমদ ও শাহানা বেগমের ছেলে।

বুধবার নুরুল ইসলামের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে আত্মীয়রা পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতে ভিড় জমাচ্ছেন। গ্রামের উঠতি যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের মাতম চলছে।  

গত শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় সময় সকাল ৭ টার (বাংলাদেশ সময় রাত ৩ টা) দিকে পুলিশী সহায়তায় ভীর (ভিসা) নবায়নের জন্য যাতায়াত পথে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হয়।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে পালমায় সড়কের পাশে জঙ্গলে তার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। করোনা সংক্রমণের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে আফ্রিকার পালমা শহরে নিজ কর্মস্থলের কাছে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশী সময় রাত ৯ টার দিকে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।  

নিহতের পরিবার ও সহকর্মী সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝর পাড়া হোছন আহমদের ছেলে নুরুল ইসলাম (২৫) দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানকারী বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়ার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন রাসেলের সার্বিক সহায়তায় ৫ বছর পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার যাওয়ার সুযোগ পায়। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বড়লোক হওয়ার লক্ষে নুরুল ইসলাম তানজানিয়া সীমান্ত এলাকা আফ্রিকার আবদুল গাদি প্রেম্বা প্রদেশের পালমা এলাকায় মুদি ও গ্রোসারী দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় সফলতা আসায় নিহতের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বাবুকেও আফ্রিকার পালমায় মুদির দোকানে  নিয়ে যায়। প্রবাস জীবনে ব্যবসায়িক ও ভিসার মেয়াদ বর্ধিত করা নিয়ে পুলিশের সহায়তায় পালমা থেকে ভিসা অফিস কার্যালয়ে যাওয়ার পথে ৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী মুসিন্দি প্রায়া মাতামিয়া পাহাড়ি জঙ্গলে নামক স্থানে পুলিশসহ ৩০-৩৫ যাত্রীবাহী গাড়ী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৩ টার দিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা জঙ্গলে নিয়ে অপহরণকারীদেরকে কুপিয়ে হত্যা করে।

নিহত নুরুল ইসলামের সহকর্মী এক সময়ে সাথে থাকা নাছির উদ্দীন রাসেল বলেন, সোমালিয়া জঙ্গী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা কেনিয়া ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠনের নেতারা শনিবার রাতে নুরুল ইসলামসহ অপর ৩০-৩৫ সদস্যদের অপহরণ করে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ৫ দিন পর নিহতের ভাইসহ বাংলাদেশী সংগঠনের নেতারা পুলিশী সহায়তায় খোঁজ করে লাশের সন্ধান পায়। জঙ্গী সংগঠনের নেতারা খুবই হিংস্র। তানজানিয়া সীমান্ত এলাকা ও ভারত মহাসাগর তীরবর্তী পালমায় হওয়ায় বাংলাদেশী প্রবাসীরা সব সময় মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সবসময় আতংকের মধ্যে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। সন্ত্রাসীদের অনেকে চাঁদা দিয়েও ব্যবসা করছেন।

নিহতের পিতা হোছন আহমদ বলেন, পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ছেলে নুরুল ইসলাম অল্প লেখাপড়া করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে আসার কথা ছিল। দেশে আসলেই নতুন বাড়ি তৈরি করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হতো। এখন তো সব শেষ হয়ে গেছে। আরো এক ছেলে বিদেশে রয়েছেন। তাকেও বলেছি, ঝুঁকি থাকলে দেশে ফিরে আসার জন্য। 

চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে নুরুল ইসলাম নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে পরিবারের কাছে গিয়ে শান্তনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও লাশ দাফনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট