চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কক্সবাজারে ৪০ টাকার বরফ ৪০০ টাকায় বিক্রি, মাছ কেনাবেচা বন্ধ

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:০৮ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে সিন্ডিকেট করে বরফের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছে মিল মালিকেরা। এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ৫ লাখ মৎস্য ব্যবসায়ী। অতিরিক্ত দামে বরফ বিক্রি ও মিল মালিকদের এমন স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (ফিশারী ঘাট) সব ধরণের মাছ বেচাকেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. কক্সবাজার জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতি ও কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ।

সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাছভর্তি ফিশিংবোটের জট। সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফিশার ঘাটে আসলেও বন্ধ রয়েছে বেচাকেনা। লোড-আনলোড হচ্ছে না মাছের ট্রাক। অলস সময় পার করছে শ্রমিকেরা। হাজার হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী মাছ ক্রয়-বিক্রয় বাদ দিয়ে ধর্মঘট পালন করছে।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু ও সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু বলেন, একটি বরফ তৈরিতে খরচ হয় ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা। ১০০ টাকায় বরফ বিক্রি করলেও স্বাভাবিক হতো। কিন্তু এখন মালিকেরা সিন্ডিকেট করে সেই বরফ বিক্রি করছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া এসব বরফের মানও ভাল না। বাইরের জেলার একটি বরফের ওজন ১০০ কেজি। কিন্তু এখানকার বরফ সাইজেও ছোট ও ওজন মাত্র ৩০ কেজি। অধিক দামেও বরফ কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে বরফ না নিলে নানা ধরণের চাপ ও হুমকি দেয়া হয়। বাইরের জেলা থেকে কেউ বরফ সরবরাহ করতে চাইলে মিল মালিকদের কাছে নাজেহাল ও হয়রানীর শিকার হতে হয়। মৎস্য ব্যবসায়ীদেরও তারা বাইরে থেকে বরফ আনতে দেয় না। কেউ বরফ নিয়ে আসলে তাকে আর মিল মালিকেরা বরফ দেয় না। মোটকথা মৎস্য ব্যবসায়ীদের পুরোদমে বরফ মিল মালিকেরা জিম্মি করে রেখেছে।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘লকডাউন শিথিল ও ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। যা কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে খালাস হয়। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দৈনিক ২০-২৫টি ট্রাকে মাছ রপ্তানির লক্ষ্যে লোড করা হয়। এসব ট্রাক প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। বিদেশেও সুনামের সাথে কক্সবাজারের মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। এ জন্য মাছ মজুদ, সংরক্ষণ ও রপ্তানিতে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার বরফের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে কক্সবাজারের ২০টির মতো বরফ মিলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার পিস বরফ উৎপাদন হয়। তাই ঘাটতি মেটাতে চট্টগ্রাম, মহিপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, খুলনা, বরগুনাসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে বরফ সংগ্রহ করেন কক্সবাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কিছুদিন ধরে কক্সবাজারে বরফ মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট তৈরি করে অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ করেছে। মাছ মজুদ ও সংরক্ষণে বরফেই খরচ হচ্ছে বিপুল টাকা। ফলে লাভের বিপরীতে লোকসান গুণতে হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ নুরুল ইসলাম চিশতী বলেন, কক্সবাজারকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করছে মৎস্য শিল্প। দেশ-বিদেশে মৎস্য রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে এখানকার ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার ফিশারী ঘাটকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫ লাখের অধিক মানুষ মৎস্য ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। মৎস্য ব্যবসা করে এসব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর পুরোদমে সাগরে মৎস্য আহরণ চলছে। সাগর থেকে মৎস্য আহরণের পর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দামে বরফ কিনতে গিয়ে চরম লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বরফ মিল মালিকরা এই নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাই এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বিষয়টি সন্তোষজনক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মাছ ও ক্রয়-বিক্রয় হবে না। তিনি বরফের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, মৎস্য আহরণ স্বাভাবিক ও বেচাকেনা সচল রাখতে স্মারকলিপি দিয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিপুল মাছ ধরা পড়ছে সাগরে। মাছগুলো সংরক্ষণ ও মজুদে বরফের বিকল্প নেই। সরকারিভাবে বরফ বিক্রি করা হয়। ভরা মৌসুমে বেসকারিভাবে মিল মালিকেরা দাম বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি দুই পক্ষ বসে আলোচনা করা দরকার। এতে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট