চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। চাক্তাই এলাকার বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজি ৬০ থেকে ৬৩ টাকা দরে। ঘণ্টাখানেক বসলাম ওই আড়তে। উঠল ৬৫ টাকা। দুপুর ১টা পর্যন্ত দাম ৭০ টাকায় ঠেকে। গেলাম আরেক আড়তে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা দরে। ২টা পেরুতে না পেরুতে দাম হয়ে গেল ৬৫-৭০ টাকা। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে ৭০ টাকায় ঠেকে।

চাক্তাই আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সরকার সমঝোতা না করলে বাজার সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমার, চায়না, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন অনেক আমদানিকারক। নতুন এলসি করা পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে।

গন্তব্য এবার চাক্তাই থেকে বড় মোকাম খাতুনগঞ্জে। সকাল থেকে ৬০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন আড়তদাররা। দুপুর গড়াতেই সেখানেও ৭০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করেন আড়তদাররা।

আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানায়, দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় মোকাম চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে নতুন করে পেঁয়াজের চালান আসেনি। পুরোনো দামে কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন যাচ্ছেতাই দামে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর অস্থির হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার।
একাধিক আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রবিবার পাইকারি মোকামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫-৩৬ টাকা। গত সোমবার সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মান ও আকারভেদে ৩৬-৩৮ টাকা। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা আসার আগেই বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। সকালে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করা পেঁয়াজ দুপুরের পর থেকে ৪৫-৫০ টাকায় ঠেকেছে। অনেকেই দাম বাড়ার আশঙ্কায় বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। একই বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করা পেঁয়াজ গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে আকার ও মানভেদে ৬৫ ও ৭০ টাকা দরে।

আড়তদার সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাতুনগঞ্জে আড়ত রয়েছে ৫১টি। আর চাক্তাই এলাকায় রয়েছে ৪০টি। এরমধ্যে ৭টি আড়ত ও দোকানদার রয়েছে। এছাড়াও ছোট ও মাঝারি আকারের আরও শতাধিক পেঁয়াজের দোকান রয়েছে।

জানা যায়, গতকাল খাতুনগঞ্জে অন্তত ২০ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। প্রতি ট্রাকে ১৩ টন করে পেঁয়াজ থাকে। আর চাক্তাই এলাকায় অন্তত ১৫ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আড়ত ও দোকান মিলে গতকাল একদিনেই অন্তত ৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ চার লাখ ৫০ হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা দরে। অথচ তিন দিন আগে তা ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছিল। সেই পেঁয়াজই ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে গতকাল একদিনেই পাইকারি মোকামে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা অন্তত দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আরও ৫০ লাখের বেশি লুফে নিয়েছেন।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘গত তিন দিনে এক ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারিনি। আর গতকাল একদিনেই তার বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।’ খাতুনগঞ্জে গতকাল দুপুর ১২টার মধ্যে অন্তত ১৫ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসেও ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। ভারত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ ঘোষণার পর পেঁয়াজের বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে ২৪-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস পূর্বকোণকে বলেন, ‘গতকাল প্রচুর পেঁয়াজ বিকিকিনি হয়েছে। ক্রেতাদের ভিড় থাকায় দর বেড়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘ভারতে এলসি করা পেঁয়াজ ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার, চায়না, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল দুপুর থেকে অনেক আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি সীমিত করা হয়েছে। অনেক আড়তদার বেশি দামে বিক্রি করার জন্য পেঁয়াজ বিক্রি না করে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। আবার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

১৫ আমদানিকারকের কারসাজি : খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভারতীয় সীমান্ত স্থল বন্দর হিলি, বেনাপোল ও সোনা মসজিদ ভিত্তিক ১৫ জন আমদানিকারক চট্টগ্রামের মোকামে পেঁয়াজ সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগী কিছু ব্যক্তি পেঁয়াজ পাঠায় চট্টগ্রামে। আমদানিকারকসহ কয়েক হাত ঘুরে এখানে পেঁয়াজ আসে সীমান্ত স্থল বন্দর থেকে।
মিয়ানমারের তিন আমদানিকারক : ব্যবসায়ী ও আড়তদার সূত্র জানায়, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন কয়েকজন আমদানিকারক। এরমধ্যে বেশির ভাগ আমদানিকারক ঢাকা ও মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারের তিন নাগরিক গত বছর বাজার অস্থির করে করেছিল। সেই তিন আমদানিকারক এবারও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট