চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে বাস ও ট্রাক টামির্নাল নির্মাণ করুন

মন্তব্য প্রতিবেদন

আশা জাগাচ্ছেন চসিক প্রশাসক

আর্থিক সংকট নিরসনে চসিককে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া দরকার

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

৬ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর- এই ৪১ দিনেই চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দাদের মধ্যে আশা জাগিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘দুর্নীতি সহ্য করা হবে না’ এমন বাক্য উচ্চারণ করার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ‘এটা নিছক কথার কথা। সকলেই বলেন।’ কিন্তু খোরশেদ আলম সুজন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি অন্যদের মতো নন। শুধু কথা নয়, কাজ করে জানান দিয়েছেন নগরবাসীর জন্য তিনি কিছু করতে চান।

মহামারী করোনার কারণে নির্বাচন না হওয়ায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই চসিক প্রশাসকের দায়িত্ব পান তিনি। ৬ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর এ যাবত তিনি কী কী করেছেন, মোটা দাগে তার একটা পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে- কেন খোরশেদ আলম সুজন নগরবাসীর আস্থাভাজন হতে শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্পোরেশনের গাড়ি থেকে তেল চুরির একটি অভিযোগ পাওয়ামাত্রই চসিক প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে দোষী কর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। সিটি কর্পোরেশনের যানবাহনের তেল চুরি বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে তিনি রীতিমতো সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসৎ কর্মীদের বড় ধরণের ঝাঁকুনি দেন।

সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নগরীতে যা হচ্ছে, সে বিষয়েও খবর নিয়ে চসিক প্রশাসক জানতে পারেন চুক্তির শর্ত ভেঙে বিপ্লব উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি কালক্ষেপণ করেননি। দল-মত বিবেচনা না করে চুক্তি ভেঙে করা কাজ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের অন্য কাজ বন্ধ করে দেন। একইভাবে ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণ কাজও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন তিনি। মার্কেটকে আগের মতো ক্রেতা-বিক্রেতাবান্ধব রাখতে কমিটির সুপারিশ না পাওয়া পর্যন্ত সব ধরণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

পোর্ট কানেকটিং সড়কের দুর্গতির কারণে চট্টগ্রাম শহরের বিশাল জনপদের কয়েক লাখ মানুষকে গত ২/৩ বছর ধরে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হত। সেই সড়কের কাজে গতি এনেছেন দায়িত্ব পাওয়ার পর আট দফা পরিদর্শনে গিয়ে। দ্রুত উন্নয়নকাজের সুবাদে পোর্ট কানেকটিং সড়কের একপাশ এখন দৃশ্যমান।
প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে নগরীর স্ট্র্যান্ড রোডের (বারিক বিল্ডিং-মাঝিরঘাট-কদমতলী অংশ) সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ থমকে ছিল দু’বছর। উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সঙ্গে কথা বলে ১৩ কোটি টাকার সেই প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়ন নিয়ে যে বিরোধ ছিল বৃহত্তর স্বার্থে সেটিও তিনি ইতিমধ্যে মিটিয়ে ফেলেছেন। পার্কের উন্নয়ন কাজ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কেই করার অনুরোধ জানিয়ে খোরশেদ আলম সুজন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ সংক্রান্তে চসিক যে মামলা করেছে সেটা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।

চসিকের নতুন প্রশাসকের যে কাজটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে সেটি হল ক্যারাভান প্রজেক্ট। রাস্তাঘাটের ছোটখাটো খানাখন্দ, বৈদ্যুতিক সমস্যা, রাস্তা-ফুটপাতে অবৈধ পার্কিংসহ সমাধানযোগ্য সমস্যাগুলো নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সপ্তাহে একদিন একেক এলাকায় যান চসিক প্রশাসক। সমস্যা দেখামাত্রই সেটি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন। ম্যাজিকের মতো সমাধান পেয়ে যান নাগরিকগণ।

রাস্তা-ফুটপাতে বসা হকারদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনতে হকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে ইউনিফর্ম ঠিক করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে কীভাবে শুধু ফুটপাতে হকাররা ব্যবসা করবেন, সেটিও ঠিক করে দেন। পথচারীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে হকাররা খেয়াল রাখছে কিনা, মাঝেমধ্যে ঝটিকা সফরে গিয়ে চসিক প্রশাসক তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।

সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক টয়লেটগুলো থেকে অবৈধভাবে পানি চুরির দীর্ঘদিনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে নিজেই মাঠে নেমেছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কার্পণ্য করছেন না।

চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের লাগাতার এহেন কর্মতৎপরতায় নগরবাসী এই কয়দিনে এটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছে যে চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে তিনি কিছু করে দেখাতে চান। স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও তিনি জঞ্জাল সরাতে এতটুকু পিছপা হচ্ছেন না। নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নগরীর সমস্যার সুরাহা করতে হলে এবং সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হলে রাস্তায় নেমে যেতে হবে- এ সত্যটি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বুঝতে পেরেছেন যা তাঁর কাজই সাক্ষ্য দেয়। একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষতম ব্যক্তি যখন নগরবাসীর অভাব-অভিযোগ নিজের চোখে দেখার জন্য রাস্তায় নেমে পড়েন তখন অধীনস্থদের দায়িত্ব পালনে হেলা করার সুযোগ থাকে না। সবসময় একরকম চাপে থাকেন সকল বিভাগের কর্মীরা। নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে প্রতিষ্ঠানকে যদি নিজ গতিতে চলার পথে রাখা না যায়, তাহলে সে প্রতিষ্ঠান জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একসময় ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায়।
নগরবাসীর প্রত্যাশা, চসিকের বর্তমান প্রশাসক অন্তত সেই গ্লানি নিজ মাথায় চাপাবেন না। অন্যদের শিখিয়ে যাবেন কীভাবে গণমুখী একটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হয়। এটাও ঠিক, প্রশাসকের কাজকে সমর্থন দিয়ে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য আর্থিক সংকট একটি বড় বাধা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সচল রাখতে আন্তরিক ভূমিকা রাখবে, সেটাই নগরবাসী কামনা করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট