চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কড়া নির্দেশনা প্রশাসনকে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

সরকারি তালিকায় বোয়ালখালীতে কোনো বালুমহাল নেই। অথচ কর্ণফুলীতে জেগে ওঠা চরের ১৭ পয়েন্টে বালু তোলা হচ্ছে উপজেলার চরণদ্বীপ ও খরণদ্বীপে। সরকারিদলের নেতাকর্মীরা লুটেপুটে খাচ্ছে এসব বালুমহাল। অবৈধ বালু বিক্রি করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন অনেক নেতা-পাতি নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না অবৈধ বালুমহালগুলো। এতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
শুধু বোয়ালখালীর নয়, একই অবস্থা নদীর ওপার রাউজান ও রাঙ্গুনীয়া উপজেলায়ও। রাউজানে সরকারি তালিকাভুক্ত ১২টি মহাল রয়েছে। কিন্তু সরকার ইজারা দিয়েছে দুটি মহাল। বাকি ১০টি মহালও দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলকারীরা সরকারি দলের নেতাকর্মী হওয়ায় অনেকটা নীরব রয়েছে প্রশাসন।
অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদ এলাহী এ চিঠি দেন। জেলা প্রশাসন ছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘চিঠির নির্দেশনা প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে ড্রেজার ও অন্যান্য সামগ্রী ধ্বংস করা করা হয়। তারপরও চুরি করে কেউ কেউ বালু উত্তোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে বালুমহাল ছিল ৯৮টি। এই থেকে হালদা নদীর বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করায় বর্তমানে ৬৮টি বালুমহাল রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, বালু মহাল ইজারা দেওয়ার আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে তালিকা চাওয়া হয়। সেই তালিকা মতে ইজারা দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী মহাল ইজারাভুক্ত করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলীর তীরবর্তী বোয়ালখালীর কধুরখীল, চরণদ্বীপ, খরণদ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের ভরাট ও অন্যান্য কাজ চলছে কর্ণফুলী নদীর বালু দিয়ে। কর্ণফুলী শ্রীপুর-খরণদ্বীপ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরবরাহ করা হচ্ছে সরকারি প্রকল্পে। সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা বালু সরবরাহ করছে ওই প্রকল্পে। সরকারি দলের স্থানীয় পর্যায়ের একটি সিন্ডিকেট বালু সরবরাহ করছে। ওয়াসার প্রকল্পে বালু সরবরাহ নিয়ে সরকারি দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ চলে আসছে। দুই পরিবারের বালুমহাল দখল নিয়ে ড্রেজার ডুবিয়ে দেওয়া ও মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত চলে আসছে। বিনে পয়সা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আছিয়া খাতুন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বন্দরের আপত্তির কারণে ইজারাভুক্ত করা যাচ্ছে না। তারপরও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, কানুনগোকে প্রতিবেদন দিতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তারপরও অবৈধভাবে টুকটাক যে তুলছে না, তা নয়।’
শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নে নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে অন্তত ১০টি বালু বিক্রয়কেন্দ্র। সবকটির নিয়ন্ত্রক সরকারিদলের নেতাকর্মী। খরণদ্বীপ, জৈষ্ঠ্যপুরা, নাজিরচর এলাকায় জেগে ওঠা চর থেকে দেদারছে বালু উত্তোলন করে আসছে বালুখেকোরা।
ইউএনও আছিয়া খাতুন বলেন, ‘শ্রীপুর-খরণদ্বীপে অভিযান পরিচালনা করা হলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইজারাকৃত একটি মহালের কাগজপত্র দেখায়। ওইখান থেকে বালু উত্তোলন করে বোয়ালখালীতে বিক্রি করে বলে দাবি তোলে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠেছে। ভাটার সময় এসব অংশ দিয়ে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়। জেগে ওঠা এসব চর থেকে ভলগেট ও ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর তীর থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এসব বালু চলে যায় বিক্রয়কেন্দ্রে।
এদিকে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বেড়েছে নদী ভাঙন। অপরদিকে এলাকার রাস্তাঘাটও নাজুক হয়ে পড়েছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভায় বার বার উত্থাপন করার পরও প্রশাসন কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট