চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দুই বছরেও ভূমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি

দুই বছরেও ভূমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি

ইফতেখারুল ইসলাম

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

নগরীর বালুছড়া এলাকায় আধুনিক বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের দুই বছর পরও ভূমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়নি। কবে সম্পন্ন হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। জেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন(চসিক) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে কয়েকটি দাগ নিয়ে জটিলতা নিরসনে আগামী রবিবার চসিক এবং জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার যৌথ বৈঠক করবেন।
অপরদিকে, প্রকল্পের ৭৮ কোটি টাকা অর্থ ছাড় করার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার চসিকের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, দীর্ঘদিন থমকে থাকা ভূমি অধিগ্রহণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ভূসম্পত্তি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার সাথে যোগাযোগ করে ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করে সিটি কর্পোরেশন জমি বুঝে পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) আবু হাসান সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নতুন দায়িত্ব নেয়ায় প্রকল্পটি নিয়ে বিশদ বলা সম্ভব নয়। একদিকে লোকবল সংকট অপরদিকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলার কারণে এল এ শাখা হিমিশিম খাচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রকল্পটি নিয়ে যোগাযোগ করেছে। আগামী রবিবার সিটি কর্পোরেশন সার্ভেয়ার ও জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার সার্ভেয়ার নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি অবিলম্বে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে।
চসিকের ভূসম্পত্তি শাখা সূত্র জানায়, ৮.১০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সিটি কর্পোরেশন থেকে যেসব দাগ দেয়া হয়েছে, জেলা প্রশাসন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে কয়েকটি দাগে ত্রুটি রয়েছে। সেবিষয়ে আগামী রবিবার জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ারের সাথে বৈঠক হবে। অধিগ্রহণের কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। অধিগ্রহণের দাগসমূহ চূড়ান্ত করার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অুনমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদনের পর ক্ষতিগ্রস্তরা মৌজা রেটের তিনগুণ হিসেবে ভূমির ক্ষতিপূরণ পাবেন।
চসিক সূত্রমতে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর উত্তর চট্টগ্রাম এবং দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির যাত্রীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়। মূল প্রকল্পটি ১৬ একর জায়গার উপর বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৮.১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা। এই জায়গাটি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়। পরবর্তীতে কোন পক্ষই বিষয়টি নিয়ে তেমন দৌড়াদৌড়ি করেনি। একারণে থমকে যায় অধিগ্রহণ কাজ।
প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর কুলগাঁওয়ের বালুছড়ায় নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা, জমি উন্নয়ন ব্যয় ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, বাস-ট্রাক টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ইয়ার্ড নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে কয়েকটি ধাপে। প্রথম ধাপে করা হবে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক কাজ। সর্বশেষ নির্মাণ করা হবে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। চারতলাবিশিষ্ট ওই ভবনে থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে প্রথম তলায় সিটি বাস টার্মিনাল, আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল একটি যাত্রী নামার লেন, ২৫টি যাত্রী ওঠার লেন, ১৪টি অতরিক্তি নামার ও অপেক্ষার লেন, ছাদযুক্ত বৃহদাকার খোলা হলরুম এবং তথ্য কেন্দ্র। থাকবে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম। এছাড়া অন্যান্য আধুনিক সব সুবিধা তো আছেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার এবং আন্তঃনগর উভয় ধরনের বাস ছেড়ে যাবে। টার্মিনালের মুখে থাকবে চারতলা বিশিষ্ট নান্দনিক ভবন। ভবনটির প্রথম তলায় সিটি বাস টার্মিনাল, আন্তঃনগর বাস টার্মিনালে একটি যাত্রী নামার লেন, ২৫টি যাত্রী উঠার লেন, ১৪টি অতিরিক্ত নামার/অপেক্ষমান লেন, ছাদযুক্ত বৃহদাকার খোলা হল রুম এবং তথ্য কেন্দ্র, তিনটি স্থানে পাঁচটি লিফট, এক জোড়া চলন্ত সিঁড়ি, তিনটি প্রশস্ত সিঁড়ি, প্রতিটি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক বৃহদাকার ওয়াশ রুম (টয়লেট), ২২টি টিকেট কাউন্টার, ওয়াইফাই সুবিধাসহ যাত্রীদের বসার জায়গা, লাগেজ রুম, ট্যাক্সি বুকিং রুম, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, দ্বিতীয় তলায় রেস্তোরাঁ, স্যুভেনীর সভা, এসি বাস যাত্রীদের বসার জায়গা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বাস-ট্রাক মালিকদের ব্যবসায়িক অফিস, প্যানোরোমা রেস্টুরেন্ট, বাস কর্মচারীদের আবাসন রুম, কমনরুম ও ওয়াসরুমসহ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩০টি কার এবং ট্যাক্সি পার্ক, পেট্রোলপাম্প, ৬৯টি বাস ডিপো, ১৭টি ওয়ার্কসপ ও সার্ভিসিং সেন্টার, চারটি সার্ভিসিং লাইন, আটটি রক্ষণাবেক্ষণ ওয়ার্কসপ লাইন, সাব স্টেশন এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টেশন থাকবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট