চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে ভালো নেই ডেইরি খামারিরা

ইফতেখারুল ইসলাম

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৪:৩২ অপরাহ্ণ

বছরখানেক আগেও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত মসুর ডালের পাউডারের দাম ছিল কেজি প্রতি ১৭ থেকে ১৮ টাকা। তা ধীরে ধীরে বেড়ে এখন পাইকারি বাজারে ২২ থেকে ২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রাবগুড়ের দাম ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর সহজে কমে না। গো-খাদ্যের অন্যান্য আইটেমের দামও একইভাবে বেড়েছে। অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ার পর দাম কমছে অত্যন্ত ধীরলয়ে। কিছুটা কমলেও আগের দামে ফিরে আসে না। যে কারণে বিপাকে পড়ছেন খামারিরা।

পতেঙ্গা এলাকার মোল্লা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হানিফ পূর্বকোণকে জানান, তার আড়াই শতাধিক গাভী রয়েছে। তিনি পাইকারি দামেই গো-খাদ্য কিনেন। গতকাল রবিবার আটা, কুঁড়ো কিনেছেন বস্তা ১০ হাজার ৩০ টাকা দরে। সামনে ধান কাটলে দাম কিছুটা কমবে। কুরবানির আগেও আটা কুঁড়োর পাইকারি দাম ছিল বস্তা প্রতি ৯শ’ টাকা। তিনি ছোলার খোসা কিনেছেন কেজি ৪০ টাকা দরে। যার স্বাভাবিক দর ছিল ৩০ টাকা। কিন্তু ধীরে ধীরে যে দাম বেড়েছে তা আর কমেনি। সাদা মটরের খোসা কেজি ৩২ টাকা এবং লাল মটরের খোসা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এসব খোসার দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। মুগডালের পাউডার ৪০ কেজি বস্তার দাম ১২শ’ টাকা। অর্থাৎ কেজি ৩০ টাকা।

তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে কেজি ২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এখন কমলেও আগের দামে ফিরে আসেনি। বর্তমানে গমের ভূষি ৩৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার ৫০ টাকায়। আমদানিকৃত ভূষি ৯শ’ ৫০ টাকা। তবে ৮শ’ ৫০ টাকা থেকে কুরবানির আগে বেড়ে ১২শ’ টাকায় পৌঁছেছিল। বর্তমানে তা কমলেও আগের দামে ফিরে আসেনি। খৈল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩১ টাকা দরে। ভুট্টা ভাঙা ৪৮ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ ৫০ টাকায়। তবে কুরবানির আগে ৯শ’ টাকা থেকে বেড়ে ১২শ’ টাকায় পৌঁছেছিল। এখন দাম কিছুটা কমলেও আগের দামে ফিরে আসেনি। হানিফ জানান, তিনি পাইকারি দরে কিনেন বলে হয়তো এই দামে পেয়েছেন। যারা খুচরা কিনেন তাদের কাছ থেকে বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি আদায় করা হয়। তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে না রাখলে খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন।
চিটাগং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ও তরুছায়া এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহেদ আয়াত উল্লা খান পূর্বকোণকে বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে গো-খাদ্যের দাম বেশ ভালভাবেই বেড়ে গিয়েছিল। এখন কিছুটা কমেছে। তবে আগের দামে আর ফিরে আসেনি। তিনি বলেন, শুধু গো-খাদ্য নয়, শ্রমিক, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতেও প্রতিবছর খরচ বাড়ছে। কিন্তু দুধের দাম বাড়ছে না। এক সময় লাখ টাকা দিয়ে গাভী কিনতে পাওয়া যেত। এখন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগে। অর্থাৎ এখন বিনিয়োগও বেশি করতে হচ্ছে। সরকার কৃষিতে যেভাবে ভর্তুকি দেয় গরুর খামারেও সে হারে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে পারে। কারণ খামারের ব্যয় কমাতে না পারলে খামারিরা টিকতে পারবে না।
খামারি ও গো-খাদ্য বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খামারে দুধ উৎপাদন ও গরু পালনে। আর এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামীতে ফার্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকেই গরু বিক্রি করে খামারের খরচ মেটাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব চট্টগ্রামেও পড়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট