চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভাসানচর দেখতে গেলেন রোহিঙ্গারা

টেকনাফ সংবাদদাতা

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৬:১৩ অপরাহ্ণ

ভাসানচর পরিদর্শনে গিয়েছেন দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতা। নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে বসবাসের উপযোগী কিনা তা দেখতে সেখানে গিয়েছেন টেকনাফ ও উখিয়া শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা। কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ওই দ্বীপে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে সরকারের। এরই অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার দু’জন নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা ভাসানচরে উদ্দেশে কুতুপালং ট্রানজিট শরণার্থী শিবির থেকে রওনা দিয়েছেন। এর আগে গত শুক্রবার টেকনাফের নয়াপাড়া শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা তিন চারদিনের প্রস্ততি নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর সেনা প্রহরায় মাইক্রোবাসে করে উখিয়া রওনা দেন। প্রতিনিধিরা উখিয়ায় পৌঁছানোর পর শুক্রবার রাতেই তাদের সঙ্গে দেখা করে আরআরআরসি মাহবুব আলম তালুকদার ভাসান চরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রওয়ানা দেয়ার আগে সকলের করোনা ভাইরাস ও সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষাঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে।
৫ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলটি কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করেন। সকালে তাদের চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা। সেখান থেকে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জলযানে করে ভাসানচরে যাবেন। রোহিঙ্গা নেতারা দেখে এসে অন্যদের বোঝালে রোহিঙ্গারা ভাসানচর যেতে রাজি হবেন। তবে এই দলের সঙ্গে জাতিসংঘের কোনও সংস্থার প্রতিনিধি বা গণমাধ্যমকর্মীরা থাকছেন না।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র মোস্তফা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। তাছাড়া ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের স্বজনরাও যোগাযোগ করতে পারছেন না। এখনও আমরা সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি’।
সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের মুখপাত্র মেজর ওমর ফারুক বলেন, ‘শনিবার ভোরে ৪০ জনের রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচরের রওনা দিয়েছেন। তারা মঙ্গলবার ফিরবেন। ভাসানচরে রোহিঙ্গা নেতাদের আগস্টের শুরুতে যাওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি’।
টেকনাফ জাদিমুরা শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি কালাম ও টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি নুর বলেন, ‘শুক্রবার রওনা দেওয়ার আগে তাদের সবার করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়েছে। ভাসানচর যদি বসবাসের উপযুক্ত হয় তবে অবশ্যই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে। আমরা স্বচক্ষে দেখে এলে সবাইকে বোঝাতে পারবো। সেজন্যই সেখানে যাওয়া’।
ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আশ্রায়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর মামুন বলেন, ‘এখানে থাকা ৩০৭ রোহিঙ্গা খুবই ভালো আছে। তারা আরাম করে খাচ্ছে-ঘুমাচ্ছে। এখনও তাদের বেসামরিক প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরাই (নৌবাহিনী) তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করছি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট