চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফুটবল রেফারিং-এ ছিটকে পড়ছে চট্টগ্রামের মেয়েরা

হুমায়ুন কবির কিরণ

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:৪৯ অপরাহ্ণ

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। আর ফুটবল খেলার প্রাণ হচ্ছে রেফারিরা। ফুটবলে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে রেফারিংটা নিশ্চয়ই অন্যতম। রেফারিদের প্রতিটি সিদ্ধান্তই কোচ, খেলোয়াড় এবং দর্শক দ্বারা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যাচাই করা হয়। সাধারণত এই রেফারিংয়ে পুরুষদের দেখা যায়। তবে হাল আমলে বিশ্ব-ফুটবলে নারীদের উপস্থিতিও উল্লেখ করার মতো। সেই ধারা ঢাকার ফুটবলেরও দেখা যায়। তবে চট্টগ্রামে যেখানে নারী ফুটবল একেবারেই অনুপস্থিত সেখানে পুরুষদের খেলা পরিচালনা করছেন একজন নারী, এমন দৃশ্য একেবারে বিরল নয়। এই যাত্রা অবশ্য দীর্ঘকালের নয়। চট্টগ্রামে প্রথম কোন নারী রেফারি ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করেন ২০১৭ সালে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপের ম্যাচে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনে নারী রেফারিদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ক্রমশ বাড়ছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের ফুটবল রেফারিংয়ে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনের ভূমিকা অনন্য। ২০২০ সালে ফিফার তালিকায় বাংলাদেশের রেফারি কোটা এগারো জন, যার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনেরই ছয়জন রেফারি রয়েছেন। ফিফার তালিকাভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে কোনো অঞ্চল/জেলা হতে এতজন রেফারি এর আগে তালিকাভুক্ত হয়নি। এসোসিয়েশনে তালিকাভুক্ত প্রথম শ্রেনির রেফারি হচ্ছে ২৩ জন, তাদের মধ্যে একজন নারী, আলেয়া বেগম আলো। আছেন তিনজন দ্বিতীয় শ্রেণির প্রমীলা রেফারি, শামীমা সুলতানা, রোমানা ইসলাম ও অর্পনা বড়ুয়া।

নারী ফুটবলে চট্টগ্রাম মোটেও সমৃদ্ধ নয়। যে কারণে নারী রেফারির সংখ্যাও বাড়ছে না। সাবেক ফিফা রেফারি, চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মিরনের নেতৃত্বে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে চট্টগ্রামের ফুটবলে প্রমীলা রেফারিদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামাজিক ও পারিবারিক বাধা ডিঙ্গিয়ে অনেকেই আসছেন রেফারিংয়ে। বিয়ে কিংবা চাকুরির কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়া, সম্মানী ভাতার অপ্রতুলতা, সেটাও নিয়মিত না পাওয়া এবং আলাদা ট্রেনারের মাধ্যমে আলাদা অনুশীলনের ব্যবস্থা না থাকা। এ লক্ষ্যে অবশ্য কাজ করছে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশন। করোনার কারণে ক্রীড়াঙ্গন স্থবির হওয়ার আগে শুধুমাত্র আগ্রহী মেয়েদের নিয়ে একটি রেফারিং ক্যাম্প শুরুর কথা থাকলেও সেটা থমকে যায়। আব্দুল হান্নান মিরন এই প্রতিবেদককে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সহযোগিতায় সেই ক্যাম্পের কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু হবে।

কথা হয় জাতীয় রেফারির মর্যাদা পাওয়া এবং ফিফা রেফারি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা চট্টগ্রামের অন্যতম নারী রেফারি আলেয়া বেগম আলোর সাথে। চট্টগ্রাম শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে বিপিএড শেষ করা আলেয়া একবাক্যে বলেন, মিরন স্যার ও এসোসিয়েশনের ভাইয়েরা না থাকলে আমার হয়তো রেফারি হওয়া হতো না। আমি ফেডারেশনকে (বাফুফে) অনুরোধ করবো যাতে রেফারিদের মাসিক বেতনের আওতায় আনা হয়। আলেয়া আরও বলেন, মেয়েদের ক্রীড়ায় চট্টগ্রাম অনেকটাই পিছিয়ে, যদি যে কোন পর্যায়ে মেয়েদের খেলাধুলা বাড়ে, তাহলে মেয়ে রেফারিও বাড়বে। আমি যখন ২০১৫ সালে শুরু করেছিলাম তখন আমরা ১৩ জন ছিলাম। কিন্তু সেই দলের মধ্যে এখন আমি একাই টিকে আছি। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে খেলার মাঠে টিকে থাকার জন্য আর্থিক নিরাপত্তা জরুরি। এটা সম্ভব হলে অবশ্যই চট্টগ্রামে নারী রেফারির সংখ্যা বাড়বে। বহুগুনে গুনান্বিতা আলেয়া বেগম আলো একাধারে ক্রিকেটার ও রেফারি। রেফারি হিসেবে জয়া চাকমাকে আদর্শ মানা আলেয়া ফিফা রেফারি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যতে কোচও হতে চান।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট