চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

চমেকে ১০ পক্ষকে মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা চালায় ২৫ ফার্মেসি

ইমাম হোসাইন রাজু

২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:১২ অপরাহ্ণ

দীর্ঘদিন থেকেই স্লিপ বাণিজ্যের অভিযোগ চমেক হাসপাতালের পূর্ব গেটের ২৫ ফার্মেসির বিরুদ্ধে। যার বিষয়ে জানা আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও। কিন্তু অজানা কারণেই এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেউই। কারণ খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল কিছু অজানা তথ্যও। মূলত স্লিপ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে হাসপাতালের কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রভাবশালী, ছাত্র সংগঠনসহ দশটি পক্ষকে মাসোহারা দিচ্ছে ফার্মেসিগুলো। অথচ দশটি পক্ষ বড় অংকের আর্থিক সুবিধা ভোগ করলেও ‘পকেট ফুতুর’ হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। দীর্ঘদিনের এমন অনৈতিক রীতি এখনও স্বাভাবিক এ হাসপাতালে।

অভিযোগ রয়েছে, মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ, পুলিশ, হাসপাতালের কর্মচারী, লিফটম্যান, আনসার, চকবাজারের কথিত যুবলীগ, রাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। বাদ যায়নি এসব ফার্মেসি সমিতির নামও। যাদের অর্থ দিয়ে স্লিপ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ফার্মেসিগুলো। আর এসব টাকা সংগ্রহের জন্য নিয়োগ রয়েছেন একজন প্রতিনিধিও। সংগ্রহের জন্য প্রতিনিধিও পায় আর্থিক সুবিধা। এরমধ্যে এতদিন এসব টাকা সংগ্রহের জন্য হীরা ফার্মেসির নুরু দায়িত্বে থাকলেও গেল মাস থেকে নতুন দায়িত্ব নেয় সিকদার ফার্মেসির মালিক তারেক। তাদের এসব টাকা সংগ্রহে সহযোগিতা করে থাকেন সুজিত, নয়ন ও কামাল নামে আরও তিনজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসির মালিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগের মতো ব্যবসা নেই। স্লিপ দিয়ে কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু মাস শেষে বিভিন্নজনকে দিয়ে দিতে হয়। টাকা না দিলে ব্যবসাও করা যাবে না। এসেই দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। অনেক সময় মারধরও করে থাকেন। বিশেষ করে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এসব কাজ করেন’।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ ফার্মেসি দোকান সমিতির সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকি প্রথমে বিষয়টি সঠিক নয় উল্লেখ করলেও কথার এক পর্যায়ে বলেন, মেডিকেলের কিছু ছাত্র অভিষেক বা তাদের কোন কাজে সহযোগিতা করতে বলেন। ওই হিসেবে তাদের ২০/২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। এর বাইরে কিছু নয়’।
তবে সভাপতির বক্তব্যের সাথে মিল পাওয়া যায়নি একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে। বরং এসব ফার্মেসি থেকে মাসোহারার একটি অংশ দিতে হয় স্বয়ং সভাপতিকেও। দোকানিদের ভাষ্যে, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৫ টি ফার্মেসি থেকে ২ হাজার ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলেন নিয়োগকৃত প্রতিনিধি। অর্থাৎ প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ৮ হাজার ১২০ টাকা চাঁদা তোলেন। হিসেবে প্রতিমাসে ২৫ টি দোকান থেকে চাঁদা আদায় হয় ২ লাখ ৩ হাজার টাকা। যা মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে ভাগ করে ওইসব ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

তারমধ্যে এক লাখ টাকা দিতে হয় মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগকে। এ টাকা ছাত্রলীগের সভাপতি/সেক্রেটারি সরাসরি সংগ্রহ করে থাকেন নুরু বা তারেকের কাছ থেকে। বাকি টাকার মধ্যে পাঁচলাইশ থানাকে দেয়া হয় ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া পাঁচলাইশ ওষুধ ফার্মেসি সমিতির নামে সভাপতিকে দেয়া হয় ১৩ হাজার টাকা, চকবাজারের যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর হয়ে জসিম নামে এক যুবলীগ নেতাকে দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা। চার হাজার টাকা দিতে হয় আলাউদ্দিন আলো নামে আরেক যুবলীগ নেতাকেও।

এছাড়া হাসপাতালের এসব ফার্মেসির স্লিপ ম্যান বা দালালদের সহযোগিতা করতে লিফটম্যান রহিম, খোরশেদকে দেয়া হয় আড়াই হাজার টাকা করে। তাদের মতো হাসপাতালের কর্মচারী আবুল কালামকেও দেয়া হয় আড়াই হাজার টাকা এবং আনসার সদস্যদের জন্য দেয়া হয় সাত হাজার টাকা। বাকি চার হাজার টাকা নেয় টাকা সংগ্রহকারী।

সংগঠনের নামে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. হাবিবুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘চমেক ছাত্রলীগ কখনই এসব অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত ছিল না। এসব আসলে মানুষের মুখের কথা। বরং চমেক ছাত্রলীগ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন’।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘একটি চক্রের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ খবরও নেয়া হচ্ছে। তবে এসব কাজে যদি মেডিকেলের কোন কর্মচারী জড়িত থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট