চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজারে ফের জমে উঠছে ঝিনুক ব্যবসা

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:১৮ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার সদরের পূর্ব কলাতলী গ্রামে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফজল করিমের বাড়ি। সৈকতের নোনা জলের প্রবাহ আর উত্তাল সাগর তরঙ্গের মূর্ছনায় ভোরে ঘুম ভাঙে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম প্রাচুর্যে বেড়ে ওঠা ফজল করিমের। অভাবের সংসারে জীবিকা নির্বাহ করতে তিনি সমুদ্র সৈকতে ঝুপড়িতে করে শামুক-ঝিনুকের পণ্য নিয়ে ফেরি ব্যবসা করেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মতো স্থানীয় এনজিও সংস্থা থেকে কিস্তি নিয়ে সৈকতে ব্যবসা তার।

কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারীতে দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ ছিল সৈকতের সকল ব্যবসা। এতে সংসারে নেমে আসে টানাপড়েন। এভাবেই দেনার জ্বালে আটকে যান তিনি। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি ফজল। বর্তমানে সীমিত পরিসরে খুলেছে পর্যটন শিল্প। দেনা পরিশোধের দায় মাথায় নিয়ে ফের সৈকতে নেমেছেন ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ী ফজল করিম। তার মতো এমন আরও হাজারো শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা রয়েছেন কক্সবাজারে, যাদের সব স্বপ্ন শামুক-ঝিনুক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই। এভাবেই জীবনের স্বপ্নগুলো শামুক-ঝিনুককে নিয়েই তৈরি করেন সাগরপাড়ের অনেক মানুষ।

এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামুক-ঝিনুকের ওপর খোদাই করে নাম লেখাতে ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ নেন পর্যটকদের কাছ থেকে। ঝিনুকের মালার দাম পড়ে ৪০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা। ঝিনুকের পুতুলের দাম পড়ে একশ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত। তবে ঝাড়বাতির দাম কিছুটা বেশি। ৬শ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয় শামুক-ঝিনুকের তৈরি ঝাড়বাতিগুলো। বিভিন্নভাবে তৈরি করা শামুক-ঝিনুকের পণ্য দিয়ে সংসার চলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ শামুক-ঝিনুকের তৈরি চোখ ধাঁধানো রকমারি বিভিন্ন জিনিসপত্র। যা পর্যটকের মন কাড়ে।

এমন কোন পর্যটক নেই যারা সৈকতে এসে শামুক-ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্র সংগ্রহে নেন না। কিন্তু করোনা সংকটে দীর্ঘদিন ধরে এসব শামুক-ঝিনুকের দোকান বন্ধ ছিল। একইভাবে আচার, বার্মিজপণ্য, শুঁটকিসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও হতাশায় দিন কেটেছে প্রায় ৫ মাস। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনরকমে জীবনধারণ করলেও কর্মচারীরা অনাহারে দিন পার করেন। তবে এখন তারা আশার আলো দেখছেন। ধীরে ধীরে খুলছে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। সাগরতীর সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানী সৈকতে হাজারো দোকান রয়েছে। লকডাউনে এসব দোকানপাট ছিল বন্ধ। সুগন্ধা ঝিনুক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, শুধু সুগন্ধা পয়েন্টে ঝিনুক, খাবার, বার্মিজপণ্য, আচার, ডাবসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৩০০ দোকান আছে। এসব ব্যবসার সাথে প্রায় ১৫শ মানুষ জড়িত। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল এসব দোকানপাট। এই বন্ধে কুটির শিল্প জাতীয় জিনিস, শামুকের ঝাড়বাতি, টুপি, হাতের ব্যাগ আর বিশেষ করে আচার নষ্ট হয়েছে অনেক। আচার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচমাস পর গত ১৭ আগস্ট থেকে এসব ব্যবসা পুনরায় চালু হয়েছে। তবে পর্যটক সীমিত থাকায় তেমন ব্যবসা নেই।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ করে যারা সৈকত এলাকায় পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের এই ব্যবসাগুলো ছিল বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তি নির্ভর। কিস্তি নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে তারা। এখন লকডাউন নেই। সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে পর্যটন ব্যবসা। হয়ত ধীরে ধীরে কেটে যাবে তাদের এই সংকট।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট