চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ থেকে আগের নিয়মে ফিরছে গণপরিবহন

সিটের বেশি যাত্রী নয় ভাড়াও আর বেশি নয়

আল-আমিন সিকদার

১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ

অবশেষে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের দোহাই দিয়ে গণপরিবহনগুলোর অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা থেকে রেহাই পাচ্ছেন যাত্রীরা। কারণ, প্রত্যাহার করা হল করোনাকালে গণপরিবহনে বাড়ানো ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া। আজ মঙ্গলবার থেকে আগের ভাড়ায় ফিরছে গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস। তিন মাস বর্ধিত ভাড়ায় বাস-গণপরিবহন চলার পর গত ২৯ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগের ভাড়ায় বাস-গণপরিবহন চলাচল করবে।

যদিও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বরাবরই ব্যর্থ হতে হয়েছে প্রশাসনকে। তবুও এবার বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। ভাড়া আগের স্থানে ফিরে গেলেও মনের ইচ্ছে মত যাত্রী তুলতে পারবে না গণপরিবহনগুলো। সিদ্ধান্তে, সিটের অধিক যাত্রী তুললে জরিমানার পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মানতে হবে মাস্ক পরা ও স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ কিছু নির্দেশনা।

যদিও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে গত ২৪ মার্চ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার দুই মাস পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গত ৩১ মে থেকে গণপরিবহন ও ট্রেন চালু করার অনুমতি দেয় সরকার। তখন বাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার শর্তে প্রায় ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এসব নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রথম দিনেই নগরীর সিটি সার্ভিসগুলো দেখিয়েছে তাদের নৈরাজ্যের চিত্র। যাত্রী তুলেছেন বোঝাই করে, আদায় করেছেন দ্বিগুণ ভাড়া। যদিও দূরপাল্লার বাসে এ চিত্র কিছুটা ভিন্ন ছিল। তবে নগরীর সড়কগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে সিটি সার্ভিসগুলোতে নিয়মিত অনিয়ম পেয়েছে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি এই অনিয়মের চিত্র সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি গণমাধ্যমে জানিয়ে ভাড়া আগের মত করার আবেদন জানায় যাত্রীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ভাড়া কমানো হলেও, সরকারের নতুন নির্দেশনা যে গণপরিবহনগুলো মানবে না সে বিষয়েও দৃঢ় বক্তব্য দিচ্ছেন যাত্রীরা।

আজ মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহনে পূর্বের ভাড়া শুরু হলেও গতকাল সোমবারও বেপরোয়া ছিল নগরীর সিটি বাসগুলো। যেমনি শুরুর দিন তারা ধার ধারেনি নিয়মনীতির তেমনি গতকাল শেষদিনও আদায় করেছে অধিক ভাড়া, তুলেছেন অধিক যাত্রী। তাই নতুন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কতটুকু হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। যদিও একদিন আগে থেকেই নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কম ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে নগরীর মেট্রো প্রভাতী সার্ভিসকে।

নগরীর বারেক বিল্ডিং থেকে দুই নম্বর গেট পর্যন্ত ১০ নম্বর বাসে চড়ে আসেন শাহনাজ নামের এক চাকুরিজীবী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে ভাড়া কমছে। তাই আজ (সোমবার) একটু বেশিই বেপরোয়া ছিল নগরীর গণপরিবহনগুলো। সিটের দ্বিগুণ যাত্রী তোলার পরেও তাদের থামানো যাচ্ছিলো না। ইচ্ছে মত যেমন এতদিন অধিক যাত্রী তোলার পাশাপাশি দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছেন তেমনি শেষদিনও করেছেন। যাত্রী উঠাতে নিষেধ করলে উল্টো বাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলছেন চালক-হেলপাররা। তাদের কাছে কিভাবে আশা করি যে, তারা নতুন সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে মেনে চলবেন। সিটের অধিক যাত্রী তুলবেন না। আমরা মনে করি, সড়কে ট্রাফিক পুলিশকে আরেকটু কঠোর নজরদারি করতে হবে। এতে করে তাদের এ নৈরাজ্য কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত মেনেই আমরা সড়কে গণপরিবহন পরিচালনা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চালক-হেলপারদের কঠোর নির্দেশনাও দিয়েছি। এরপরও সিটির ভেতরে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। অধিক যাত্রী তোলার পাশাপাশি তারা মানেনি স্বাস্থ্যবিধিও। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগের ভাড়ায় বাস ও গণপরিবহন চালাতে আমরা প্রস্তুত। এরই মধ্যে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিকদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’

পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে উঠা এতসব অনিয়ম ও অভিযোগ কিছুটা হলেও স্বীকার করে নিয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক অলী আহমদ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘মালিকরা আমাদের শতভাগ আইন মেনে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরাও প্রতিটি চালক-হেলপারকে এ নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও যদি কেউ আগের মত অতিরিক্ত যাত্রী তোলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ করবো না।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট