চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফার্নিচার শিল্পের দুর্দিন: ৩ লাখ মানুষের নীরব কান্না

মোহাম্মদ আলী

২৯ আগস্ট, ২০২০ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

করোনার কারণে তিন মাস বন্ধ থাকার পর জুনে চট্টগ্রামের ফার্নিচার শিল্প খুললেও এখনো আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এ খাতে জড়িত ব্যবসায়ীরা। আশানুরূপ বেচাবিক্রি না থাকায় তারা এ সমস্যায় পড়েছেন। এর আগে করোনার কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুমগুলো বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর জুনের শেষের দিকে এগুলো খুলে দেয়া হয়। কিন্তু ব্যবসা না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ছোট-বড় প্রায় ৪ হাজার ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুম রয়েছে। এ খাতে ব্যবসায়ী, কাঠ মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, বিক্রয় কর্মী, দারোয়ান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মী, ভ্যান চালক, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ প্রায় তিন লাখ মানুষ জড়িত। কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা না থাকায় তারাও এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানায়, প্রতি বছর রমজান মাস তাদের ব্যবসার বড় মওসুম। এ মাসে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী ব্যবসা করে থাকে। এ জন্য তাদের আগাম প্রস্তুতিও থাকে। কিন্তু গেল রমজানে করোনার কারণে তাদের ব্যবসা দূরে থাক, শো-রুমও খুলতে পারেনি। তাছাড়া গত ৫ মাস ধরে তুলনামূলক বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান হ্রাস এবং মানুষের মধ্যে আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় বেচাবিক্রি কমে গেছে। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

নগরীর বাকলিয়া বলীরহাট ফার্নিচার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনায় বন্ধ থাকার পর জুনে এখানকার ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুমগুলো খুললেও তেমন কোন ব্যবসা নেই। কখন এই ব্যবসার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে তা নিয়ে এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

হাজী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বলীরহাট এলাকায় ছোট-বড় দেড় হাজার ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুম রয়েছে। এতে কাজ করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। ২৬ মার্চ থেকে করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।’

বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে ছোট-বড় প্রায় ৪ হাজার ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুম রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিকাশমান এ শিল্পের উৎপাদন ও বিপণনের সাথে তিন লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। করোনার কারণে এ শিল্পের সর্বস্তরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফার্নিচার নির্মাণ থেকে বিপণন সবকিছুতে একটা বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এ অবস্থায় জুনে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও তেমন কোন ব্যবসা নেই। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে ফার্নিচার ব্যবসা।
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি সৈয়দ এ এস এম নুরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্প দেশের গন্ডি পেরিয়ে বর্হিবিশ্বের তুলে ধরার মতো অবস্থানের দিকে যাওয়া একটি উদীয়মান শিল্প। এ জন্য আধুনিক কারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন সাহসী বিনিয়োগকারীরা। সৃষ্টি হয়েছে দক্ষ ও মেধাবী কারিগর। কিন্তু করোনার কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে অন্যদের মতো ফার্নিচার শিল্প ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাও অসহায় অবস্থায় পড়ে যায়। গত দুই মাস ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও বেচাবিক্রি কম থাকায় অনিশ্চয়তার মধ্যে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ফার্নিচার শিল্প।’
এদিকে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, ছোটপুল ও বড়পুল এলাকায় দুই যুগ ধরে প্রায় ৮০টি ছোট-বড় ফার্নিচার শো-রুম গড়ে ওঠে। কিন্তু পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে এক্সেস রোড এলাকায় ব্যবসায়ীরা বিগত কয়েক বছর কোন ধরনের ব্যবসা করতে পারেনি। পরবর্তীতে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের উঁচু ও প্রশস্তকরণ কাজের কারণে কয়েক বছর ধরে ফার্নিচার ব্যবসায় ধস নামে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সড়কটির কাজ শেষ হলে ফার্নিচার ব্যবসা পুনরায় শুরু হয়। কিন্তু দুই মাসের ব্যবধানে করোনার ধাক্কা লাগে ব্যবসায়। বর্তমানে ওখানকার ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুমগুলো খুললেও তেমন ব্যবসা নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট