চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ব্যবসা নেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৮ আগস্ট, ২০২০ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করছে। গত ঈদুল আজহার পর থেকে বেচাকেনা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় কমছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এতে দিশাহীন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিমত, ব্যবসায়ীরা এখন করুণ সময় পার করছেন। এতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে উদ্বিঘ্ন তারা।

এদিকে, গত সপ্তাহে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জোয়ারের পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। পানিতে ডুবে থাকার কারণে তিন-চার দিন ব্যবসা-বাণিজ্য অচল ছিল।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা আর জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব পড়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। বেচাকেনা ও লেনদেন কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্যপাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ ভোগ্যপণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য উঠানো-নামানো চলছে। তবে সেই চিরচেনা তীব্র যানজট আর গাড়ির দীর্ঘ সারি ছিল না। অনেকটা ফাঁকা ছিল রাস্তাঘাট। দোকান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীরা অনেকটা ক্লান্তিহীন সময় পার করেন।

আমদানিকারক, ট্রেডিং ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে। তার প্রভাব পড়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। কয়েক প্রকারের ভোগ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

বেচাকেনা কমে যাওয়ার কারণে কমছে ভোগ্যপণ্যের দামও। তবে পাম তেলের দাম উঠা-নামায় রয়েছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে পাম অয়েল মণ প্রতি বিক্রি হয়েছিল ২৭৪৫-২৭৭০ টাকা দরে। এরমধ্যে অনেকবার দর উত্থান-পতন হয়েছে। গত ঈদুল আজহায় মণ প্রতি পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ২৭শ’ টাকা দরে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিটি গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ২৬২০ টাকা দরে। এস আলমের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ২৪২০-২৪৩০ টাকা। তবে সয়াবিন তেলের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ৩১৫০ টাকা দরে।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, পেঁয়াজের দাম দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪-২৫ টাকা ও মধ্যম মানের পেঁয়াজ ১৫-২০ টাকা দরে। এখন ভারতীয় পেঁয়াজে বাজার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তাই অন্য দেশের পেঁয়াজের কাটতি নেই।

তবে চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে। ১৪৫-১৫০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের আমদানি করা আদা ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এলসি ও ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো চাপাচাপি শুরু করেছে। ঋণ শোধের জন্য পণ্য বিক্রি করে টাকা নগদ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু বেচাকেনা কমে আসায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে দুচিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে দেনাদারের চাপও দিন দিন বাড়ছে। দেনাদার ও ঋণ পরিশোধের জন্য বেশি দামে কেনা পণ্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।
ভোগ্যপণ্যের মধ্যে চালের দাম ছাড়া অন্য সব ধরনের পণ্যের দাম এখন কমতির দিকে। হু হু করে বাড়ছে শুধু চালের দাম। গত সপ্তাহে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৫৯ টাকা দরে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকা। মুগ ডাল ৯০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০-৮৫ টাকা। চিনির দাম মণ প্রতি দুই হাজার টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১৯৭০ টাকা দরে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, করোনার সংক্রমণে এখনো অনেক মানুষ কর্মহীন। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এতে বেচাকেনা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

খাতুনগঞ্জের ট্রেডিং ব্যবসায়ী মেসার্স আমান এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজি আমান উল্লাহ বলেন, ‘মিল মালিকদের যোগসাজশে ডিও ব্যবসায়ীরা সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার অস্থির করে তুলেছে। শেয়ার বাজারের মতো ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে খেলছে ডিও ব্যবসায়ীরা।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট