চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা টিউবের রিং স্থাপন সম্পন্ন

আলোর পথে দৃশ্যমান টানেল

ইমরান বিন ছবুর

২৭ আগস্ট, ২০২০ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী টিউবের রিং বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন টিউবটিতে আনুষাঙ্গিক কাজ চলছে। তবে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে আরো কিছু কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে খনন কাজ করে এই রিং বসানো হয়েছে। টিবিএমটি আনোয়ারায় নদীর তলদেশে ঘুরানো হবে। এরপর একইভাবে চলতি বছরের নভেম্বরে টিবিএমটি নদীর তলদেশে মাটি খনন করে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গার দিকে আসবে। এ পর্যন্ত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণ কাজের ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী।

টানেলের ভিতরে দুটি টিউবের মধ্য দিয়ে যান চলাচল করবে। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৪৫০ মিটার। একটি টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী যান যাবে। অন্যটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী যান আসবে। ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার মূল টানেলের সাথে আনোয়ারা অংশে ৫ দশমিক ৫২৭ কি.মি এবং পতেঙ্গা অংশে দশমিক ৫৫ কি.মি সংযোগ সড়ক থাকবে। পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী টিউবটির কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। তবে চলতি বছরের জুনে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী টিউবটির রিং বসানোর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও করোনায় শ্রমিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী টিউবের বোরিং এর কাজ সম্পন্নসহ রিং বসানো হয়েছে। তবে যান চলাচলের জন্য উপযোগী করতে আরো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। বোরিং মেশিনটি আনোয়ারায় ঘুরানো হবে। এরপর একইভাবে নভেম্বরে বোরিং মেশিনটি নদীর তলদেশে মাটি খনন করে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গার দিকে আসবে।
করোনার কারণে কাজের ধীরগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর দেশ ও বিদেশের অনেক শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাই কাজের কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। তবে করোনার মধ্যে নদীর তলদেশে বোরিং কাজ চলেছে। শ্রমিক-কর্মকর্তারা এখন ধীরে ধীরে কাজে ফিরতে শুরু করেছে। তারা কোয়ারেন্টাইন মেনে কর্মস্থলে ফিরছে।

জানতে চাইলে টানেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, করোনাকালে শ্রমিক সংকটে ‘বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের কাজের গতি কিছুটা কমেছে। দেশি বিদেশি প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া এই টানেলে শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছিল। মার্চের প্রথম দিকে দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে চীনের অনেক শ্রমিক-কর্মকর্তা নিজ দেশে চলে গিয়েছিল। যারা কিছুদিন যাবত কাজে ফিরছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চীনের সাংহাই শহরের আদলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি এন্ড টু টাউন’ মডেলে রূপান্তরিত করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এন্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের কাজ পায়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের মূল খনন কাজ উদ্বোধন করেন।

এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ঋণ হিসেবে চীনের চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক দেবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। তবে প্রথমে টানেলের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাড়তি জমির প্রয়োজনীয়তা ও জমির মূল্য বাড়ায় এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে টানেল নির্মাণে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গবন্ধু টানেল সূত্র আরো জানায়, নগরীর পতেঙ্গা হয়ে নদীর তলদেশে ঢুকে আনোয়ারা অংশের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে বের হবে। নদীর তলদেশে এর গভীরতা হবে ১৮ থেকে ৩১ মিটার।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট