চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চকরিয়ায় নির্যাতনের শিকার রাঙ্গুয়িার মাদক কারবারি সাজেদা বেগমসহ ভাইবোনদের ইছাখালি আদিলপুরস্থ বাড়ি।

চকরিয়ায় নির্যাতনের শিকার মা-মেয়েসহ অন্যরা রাঙ্গুনিয়ার চিহ্নিত গরুচোর !

রাঙ্গুনিয়া সংবাদদাতা 

২৪ আগস্ট, ২০২০ | ৯:১৩ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরুচোর সন্দেহে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের শিকার মা-মেয়েসহ সবাই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চিহ্নিত গরুচোর ও মাদক কারবারি। তারা রাঙ্গুনিয়ার কুখ্যাত এজলাস ডাকাত ও মাদক সম্রাজ্ঞি রবিজার বংশধর। তাদের বর্তমান নিবাস রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৩ নাম্বার ইছাখালি ওয়ার্ডের আদিলপুর গ্রামে। তবে তারা বেশিরভাগ সময় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে মাদক ব্যবসা করেন।

এরা কুমিল্লা বর্ডার দিয়ে ফেনসিডিল, কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ও কাপ্তাই থেকে চোলাই মদের চালান চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করেন। মাঝে মধ্যে সুযোগ বুঝে সিএনজি অটোরিক্সা ও মিনি ট্রাক নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে গরু ছাগল চুরি করে সটকে পড়েন বলে আদিলপুর গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়। প্রায়সময় তাদের বাড়িতে হঠাৎ গরু ছাগলের দেখা মিলতো আবার কয়েকদিন পর সেগুলো বিক্রি করে দিতো বলে আশপাশের লোকজন জানান।

আদিলপুর গ্রামে মাদক কারবারি ও চুরি চামারির পরিবার নামেই অধিক পরিচিত এই পরিবার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় নির্যাতনের শিকার পারভিন আক্তার (৪০) এর প্রকৃত নাম সাজেদা বেগম প্রকাশ সাজ্জনি। সে পুলিশের কাছে প্রকৃত নাম গোপন করেছেন। তার স্বামীর নাম মনছুর আলী হলেও সেখানে লিপিবদ্ধ করেছেন আবুল কালাম নামে। তার ছেলের নাম মো. জোবায়েদ (২১) এর প্রকৃত নাম গোপন করে লিখেছেন মো. এমরান। নির্যাতনের শিকার অপর দুই মেয়ে হলেন সেলিনা আকতার শেলি (২৮) ও রোজিনা আক্তার (২৩)। তারাও মায়ের সাথে মাদক ব্যবসা ও গরু ছাগল চুরির সাথে জড়িত। অথচ চকরিয়া থানায় আটকের পর তারা ভুয়া নামের পাশাপাশি ঠিকানা বলেছিলেন পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায়। তবে সাজেদা বেগমের স্বামী মনছুর আলীর গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা থানার পড়ৈকোড়া ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায়। সাজেদা বেগমের ছোট ভাই মো. নাজিম উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালি এলাকার মো. আহমদ কবির জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় আটক সাজেদা বেগম প্রকাশ সাজ্জনি রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের কুখ্যাত মৃত এজলাস ডাকাতের মেয়ে। কর্ণফুলি নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তারা ইছাখালি আদিলপুর গ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়েন প্রায় দুইযুগ আগে। সাজ্জনির মা মৃত রবিজা খাতুনও ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ মাদক সম্রজ্ঞি। মায়ের হাত ধরেই পরিবারের সবাই এখন মাদক কারবারের সাথে জড়িত। সাজেদা বেগম সাজ্জনির তিন মেয়ে এক ছেলের সবাই আন্তজেলা মাদক কারবারি বলে এলাকায় প্রচার আছে।

তিনি বলেন, কয়েকমাস আগেও সাজেদা বেগম সাজ্জনি চন্দনাইশ উপজেলায় গরু চুরি করে পালানোর সময় গ্রামের লোকজন ধরে ফেলেন। পরে স্থানীয়রা শালিস করে মুচলেখা দিয়ে ছাড়া পান। এভাবে কিছুদিন পরপর গরু ছাগল নিয়ে আসতো আদিলপুরের বাড়িতে। এবং সেগুলো বিক্রি করতো এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকায় চকরিয়ায় নির্যাতনের ছবি দেখে তাদের চিনতে পেরেছেন বলে জানান আহমদ কবির।

আদিলপুর গ্রামের ইলিয়াছ তালুকদার জানান, সুচতুর এই মাদক কারবারি ও চোর পরিবারের সকলেই যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তখন সঠিক নাম ঠিকানা গোপন রেখে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে পাড় পেয়ে যান।

চকরিয়ায়ও গণপিটুনির পর পুলিশের কাছে সঠিক নাম ঠিকানা গোপন করেছেন পেশাদার এই মাদক ব্যবসায়িরা। তারা রাঙ্গুনিয়ায় কোন অপরাধ করে পালিয়ে যান শহরের লালখান বাজারের বাসায়, সেখানে মাদকের কোন অভিযান চললে গা ঢাকা দেন সাজ্জনির স্বামি মনছুরের আনোয়ারা থানার ছত্তারহাটের বাড়িতে। এজলাস ডাকাতের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই আন্ত:জেলা মাদক ব্যবসায়ি বলে জানান ইলিয়াছ তালুকদার।

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি হিসেবে মৃত রবিজা খাতুনের পরিবারের নাম রয়েছে পুলিশের তালিকায়। তবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় বর্তমানে কোন মামলা আছে কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়াকে মাদকমুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

পূর্বকোণ / জিগার-আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট