চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এপস নয়, দর-দাম মিললেই রাইড

আল-আমিন সিকদার

২৩ আগস্ট, ২০২০ | ১:৩৬ অপরাহ্ণ

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের কয়েকটি সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি ছিল এপসভিত্তিক রাইড শেয়ার বন্ধ করে দেয়া। কারণ, এই রাইড শেয়ার থেকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ রাখা হয় রাইড শেয়ারভিত্তিক এপসগুলো।

তাই বলে বন্ধ ছিল না মোটরসাইকেলে চেপে গন্তব্যে পৌঁছানো। নানান কৌশল অবলম্বন করে রাইড শেয়ার করেছেন চালকরা। এখনতো অনেকটা রিকশা-অটোরিকশার মত যাত্রী দেখলেই কাছে গিয়ে ‘কই যাবেন’ জানতে চাচ্ছেন চালকরা। দামে-দরে মিললে দিচ্ছেন রাইড সেবা। লকডাউনের শুরুর দিকে এগুলোর ওপর ট্রাফিক পুলিশ কঠোর নজরদারি চালালেও এখন সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় কমেছে এর মাত্রা। তাই করোনা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এখনো অন্যজনের ব্যবহৃত হেলমেট পরেই রাইড করছেন যাত্রীরা। শুধু কি তাই, এখন অনেক চালক রাইড শেয়ার করছেন অনলাইন এপসে রেজিস্ট্রেশন না করেই। যা অবৈধ এবং ধরতে পারলে জরিমানাসহ বাইক আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন নগর ট্রাফিক বিভাগ। এমনকি তাদের কারণে সড়কের গূরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ট্রাফিক বিভাগের।

করোনার কারণে বন্ধ রাইড শেয়ার করা অনলাইন এপসগুলো। তবে সরেজমিনে দেখা মিলছে উল্টো চিত্র। মোড়ে মোড়ে সিএনজি অটোরিকশার মত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাদের। যাত্রী দেখলেই মোটরবাইক রেখে ছুটছেন তার কাছে। জানতে চাইছেন গন্তব্য, দিচ্ছেন মোটরবাইকে যাওয়ার প্রস্তাব। নগরীর ইপিজেড মোড়ে এসে দাঁড়ানো মাত্রই সিএন্ডএফে কর্মরত রিমনকে কোথায় যাবেন বলে গন্তব্য জানতে চাইতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন মোটরচালককে। শেষ পর্যন্ত রিমনের গন্তব্য সিমেন্ট ক্রসিং-এ যেতে রাজি হয় চালক মো. আব্বাস। ২ কিলোমিটারের পথটির ভাড়া নির্ধারণ হয় ৬০ টাকা। ভাড়া নিয়ে যাত্রী রিমনের কোন অভিযোগ না থাকলেও মো. আব্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হয় রাইড শেয়ার করার মাধ্যম সম্পর্কে। চালক মো. আব্বাস পূর্বকোণকে বলেন, ‘এপস বন্ধ থাকায় এখন মুখে-মুখে ভাড়া নির্ধারণ করি। তাই প্রতি মোড়ে গিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যদিও এটা নিষিদ্ধ তবুও পেটের তাগিদে, কিছু করার নেই। আর সবকিছু স্বাভাবিক করে পাঠাও-উবার বন্ধ রাখার কোন মানে হয় না। এখন গণপরিবহনের যে চিত্র, তার তুলনায় বরং আমরা অনেক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রাইড শেয়ার করছি। আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

অন্যদিকে একই স্থানে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় আরও বেশ কিছু মোটরবাইক চালককে। যাদের অনেকের বাইকের সামনেই ছিল না অনলাইনভিত্তিক এপসগুলো থেকে দেয়া জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর স্টিকার। ওসব বাইকগুলোর কাছে কোন অনলাইন এপসে তাদের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে তারা স্থান ত্যাগ করে।

এদিকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন এবং আইন অমান্য করে রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেল শনাক্ত হলে জরিমানার পাশাপাশি আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন নগর ট্রাফিক পুলিশের বন্দর বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক মশিউর রহমান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখনো অনেক মোটরবাইকের চালক ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাইড শেয়ার করছেন। যা আইন অমান্য করা। এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তাছাড়া পাঠাও এবং উবারের বাইকগুলো যেন আমরা দেখেই বুঝতে পারি সেজন্য ৯৯৯- স্টিাকার লাগাতে পরামর্শ দিয়েছি। এখন সে অনুযায়ী সকল রাইড শেয়ার করা বাইকে জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এর স্টিকার থাকবে। কিন্তু যাত্রী বহন করতে এখন অনেকেই সেই স্টিকার হয়ত তুলে ফেলেছেন। এ বিষয়েও আমরা নজরদারি করছি।’

পাশাপাশি এসব চালকরা যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান নেন এতে যানজটের সৃষ্টি হয় বলেও মন্তব্য করেছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

অভিযোগের চিঠি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনলাইন রাইড শেয়ার এপস উবারের চট্টগ্রামের মুখপাত্র শোভন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করার বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন নগর ট্রাফিক বিভাগ। যার প্রতি উত্তরে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শও দিয়েছি।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট