নগরীর জলাবদ্ধতারোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। একনেক সভায় পাস হওয়ার দেড় বছর পর শুরু হচ্ছে প্রকল্পটি। পাউবো সূত্র জানায়, নগরীর জলাবদ্ধতারোধে সিডিএ’র মেগাপ্রকল্প পাস হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এখন বাস্তবায়নের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক সেনাবাহিনীর কর্নেল কবিরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ফ্লাড ওয়াল ও অন্যান্য কাজের নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবে।’
২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদন দেয় একনেক সভা। যার ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিজান চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, ‘একনেক সভায় পাস হওয়ার পর প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে সার্ভে করা হয়েছে। জিও অনুমোদনের পর প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের নকশা (ডিজাইন) প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে চূড়ান্তভাবে সার্ভে করা হচ্ছে। এরপর ডিজাইন প্রস্তুত করা হবে।’
চলতি মাসে ঢাকা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন বিভাগের প্রধান প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পাউবো’র কর্মকর্তারা দুই সপ্তাহ ধরে প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা সার্ভে করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর-১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পটি শহর ও চট্টগ্রাম বন্দর সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। অনেক সার্ভে ও পরিকল্পনা নিয়ে ডিজাইন করতে হচ্ছে। অক্টোবর থেকে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবে বলে জানান তিনি।
প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘প্রকল্পের অনুকূলে এখনো অর্থ ছাড় করা হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম কিস্তি ৫০ কোটি টাকা ছাড়ের জন্য চিঠি প্রদান করা হয়েছে।’
প্রকল্পে যা রয়েছে
প্রকল্পে দুই দশমিক ৭ কি.মি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ১৮ দশমিক ৯৬৫ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল (বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ), এক কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ এবং ২৩টি খালে রেগুরেটর নির্মাণ। এতে ৬৯টি পাম্প স্থাপন করা হবে।
কর্ণফুলী নদীর মোহনা নেভাল একাডেমি থেকে ১৫নং ঘাট পর্যন্ত দুই দশমিক ৭ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১৫নং ঘাট থেকে বন্দর সীমানা পর্যন্ত আট দশমিক ৬৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বন্দরের সীমানা থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত চার দশমিক ৪০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং কালুরঘাট সেতু থেকে হাটহাজারীর মদুনাঘাটের কাটাখালী খাল পর্যন্ত ছয় দশমিক ৫০ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
২৩ খালে রেগুরেটর নগরীর ২৩টি খালে রেগুলেটর স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে কর্ণফুলীতে ১৩টি ও হালদায় রয়েছে ১০টি খাল। যাতে বসবে ৬৯টি পাম্প। খালগুলো হচ্ছে নিজাম মার্কেট খাল, ১৫নং ঘাট খাল, লালদিয়ারচর খাল-১, লালদিয়ারচর-২ খাল, বোট ক্লাব খাল, ইস্টার্ন রিফাইনারি খাল, ৯নং গুপ্ত খাল, রুবি সিমেন্ট খাল, নয়ারহাট খাল, মোগলটুলি খাল, স্ট্যান্ড রোড খাল, সদরঘাট-১ ও ২ খাল, কালুরঘাট এলাকায় মোহরা খাল নামে আটটি খাল, কৃষ্ণখাল, কৃষ্ণ খালের শাখা খাল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করা, পাম্প হাউস নির্মাণের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও জমে থাকা বৃষ্টির পানি যথাযথ ব্যবহার করা। রেগুলেটর নির্মাণে শহর এলাকায় পানির প্রবেশ প্রতিরোধ করা এবং কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ারের পানি থেকে শহরকে রক্ষা করা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ জুলাই প্রকল্পের ডিপিপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা হয়। কর্ণফুলী নদীর মোহনা নেভাল একাডেমি থেকে শুরু করে হাটহাজারীর মদুনাঘাটের কাটাখালী খাল পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, স্লইস গেট, রেগুলেটর স্থাপন ও দুই লেনের সড়ক নির্মাণের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম মহানগরীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়। ঢাকার সার্ভে প্রতিষ্ঠান জিপিএস প্রকল্পের আইডব্লিউএম (ডিজিটাল) সার্ভে করে প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) জমা দেয়। সিডিএ’র জলাবদ্ধতারোধের মেগাপ্রকল্প পাস হওয়ার পর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পাউবো’র প্রকল্পটি। শেষপর্যন্ত সিডিএ’র প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন অংশ বাদ দিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সংকুচিত আকারে অনুমোদন পায়।
পূর্বকোণ/এএ