চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিষ্ক্রিয় অভিযান, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি-নিরাপদ দূরত্ব

নিষ্ক্রিয় অভিযান, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি-নিরাপদ দূরত্ব

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২২ আগস্ট, ২০২০ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

গতকাল ছিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ষোলশহর ২নং গেট এলাকার বিপ্লব উদ্যানে আড্ডা, গল্প ও খানাপিনায় ব্যস্ত ছিলেন কয়েকশ তরুণ-তরুণী। তাদের অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করেনি। স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার বালাই ছিল না।

শুধু তাই নয়, শপিং মল, মার্কেট, দোকান, হাট-বাজার, যানবাহন, অফিস-আদালত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবখানেই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাত্রা। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি, নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা, স্যানিটাইজার ব্যবহার, মসজিদে জায়নামাজ নিয়ে যাওয়া-কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের অভিযান শিথিল হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে জীবনযাত্রা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের অভিযান শিথিল হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটেরা মাঠে তৎপর রয়েছে। কাজ করছে। হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জরিমানাও করছে। তারপরও মানুষের সচেতনতা বাড়ছে না। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের ভয় কিছু কমে গেছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে’।

মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কিন্তু জনগণ এখনো পুরোপুরিভাবে তা মানছে না। হাট-বাজার থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাস্কবিহীন চলাফেরা করছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলায় কঠোর ভূমিকা পালন করেছিল জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী। সেই অভিযান এখন অনেকটা ম্রিয়মান।। দৃশ্যমান বড় অভিযান দেখা যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন অভিযান অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ খুব বেশি যে কমেছে তাই নয়। তাই মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর কাজ করছে প্রশাসন’। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান ডিসি।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শপিং মল, মার্কেট ও দোকানের সামনে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার জন্য গোল চিহিৃত রয়েছে। করোনা সংক্রমণের পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তা দেয়া হয়েছিল। এখন মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে কেনাবেচা ও বাজার-সওদা করা হচ্ছে। যানবাহনেও একই দৃশ্য দেখা যায়। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের শর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট খোলা ও যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
করোনা সংক্রমণের পর মসজিদ নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উপাসনায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে মাস্ক ও জায়নামাজ ব্যবহারের শর্তে মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয় সরকার। প্রশাসনের অভিযানে দীর্ঘদিন তা মেনে চললেও এখন আর তা মানা হচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাচ্ছে।

দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, হাট-বাজার, শপিং মল, দোকান, মার্কেট, রাস্তাঘাট, যানবাহনে মানুষের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। সরকার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও তা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে অবচেতনতা বেড়েই চলেছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ৮৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩০৪ জন। মৃত্যুর সংখ্যা এ পর্যন্ত ২৫৭ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ করোনাসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, জনগণকে নিরাপদ রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। তা অব্যাহত থাকলে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট