বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ধরেছে। দেবে গেছে ব্লক ও বাঁধ। ভাঙনের কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকছে। তা ঠেকাতে ২৯৩ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের পেটে ঢুকেছে আরও কয়েকটি আপৎকালীন মিনি প্রকল্প। বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এভাবে চলছে নয়-ছয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্প ও আপৎকালীন জরুরি ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এমবি বই কাটাকাটি ও ঘঁষামাজা করে কাজের চেয়ে অতিরিক্ত বিল প্রদান করা হয়েছে। ‘কমিশনের’ মাপকাঠিতে বিল ছাড় দেয়া হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশ ছাড়া অতিরিক্ত বিল পরিশোধের কোনো সুযোগ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলছে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে। বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ছনুয়া অংশে অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজে কাজের জন্য নির্ধারিত ব্যয়সীমা ছিল ২০ কোটি টাকা। গত জুন মাসে এক ঠিকাদারকে কাজের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা ছাড় দেয়া হয়। পরবর্তীতে এমবি (কাজের পরিমাণ) বই ঘঁষামাজা ও কাটাকাটি করে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করেছেন।
একই উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নে পোল্ডার নং ৬৪/২এ অংশে বাঁধ পুনর্বাসন ও নিষ্কাশন প্রকল্পে খাল পুনর্খনন, বেড়িবাঁধ সংস্কার, অবকাঠামো নির্মাণ ও স্লুইস গেট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১১ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। মাটির কাজের জন্য ৫ শতাংশ ও ব্লকের কাজের জন্য ৩ শতাংশ উৎকোচ নিয়ে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। পাউবো সূত্র জানায়, গত জুন মাসে এমবি বই একজন ঠিকাদারকে কাজের বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা ছাড় করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। কিন্তু পরবর্তীতে ওই প্রকৌশলী এমবি বই কাটাছেঁড়া করে ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা ছাড় দেন। এ প্রকল্পের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য বাজেট সীমা ছিল সাড়ে চার কোটি টাকা। শতভাগ কাজ দেখিয়ে কাজের পুরোপুরি অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
একই দশা সন্দ্বীপের বেড়িবাঁধের পোল্ডার নং ৭২ এর বেড়িবাঁধ পুনর্নিমাণ ও স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ এবং নিষ্কাশন প্রকল্পে। ট্যাক্সফোর্সের সিসি ব্লক গণনা না করা ও মাটির কাজ পরিমাপ না করে কাজের চেয়ে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তাও করা হয়েছে এমবি বই কাটাছেঁড়া করে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি টাকা। শতভাগ কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের সব বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে মেগাপ্রকল্প কাজ হচ্ছে মিরসরাইয়ে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজার) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা নির্মাণ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল পাঁচশ কোটি টাকা।
জরুরি প্রকল্পের নামে ‘হরিলুট’
গত অর্থ বছরে অনুন্নত রাজস্ব খাতের আওতায় বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে। বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ৩০ ও ৪০ শতাংশ কাজের শতভাগ দেখিয়ে পুরো বিল প্রদান করা হয়েছে।
২০১৯-২০ সালের অর্থ ছাড়ের বিল কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর-২ বিভাগের অধীনে বাঁশখালী, খাগড়াছড়ি ও সন্দ্বীপে জরুরি ভিত্তিতে ২৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাঁশখালীর উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প পোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি, ৬৪/১বি, ৬৪/১সি, ৬৪/১সি প্রকল্পে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পওর-২ বিভাগে প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
দেখা যায়, বাঁশখালীর খানখানাবাদ, সাধনপুর, ছলিমপুর, পুকুরিয়া, ছনুয়া ইউনিয়নে উপকূলীয় বাঁধের সংস্কার ও মেরামতের জন্য আপৎকালীন হিসেবে তিন কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়া হলেও এসব এলাকায় প্রায় তিন শ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের ভেতরে আপৎকালীন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া অভিযোগের বিষয়ে বলেন, বাঁশখালী প্রকল্পের বাজেট ছিল ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকার। কোনো প্রকল্পে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়নি। তিনি দাবি করেন, ট্রাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোনো কাজের বিল পরিশোধ করার সুযোগ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বিল পরিশোধের লক বইয়ে কাটাকাটি ও ঘঁষামাজা করে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। যে ঠিকাদার যত বেশি উৎকোচ প্রদান করেছেন, তাকে বেশি পরিমাণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমবি বই কাটাছেঁড়া করার কোনো সুযোগ নেই। এটা গোপন বিষয়।’
পূর্বকোণ/এএ