চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এখনও কর্মহীন ১৭% পরিবার

করোনায় বেড়েছে নতুন দরিদ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ আগস্ট, ২০২০ | ৪:২৬ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের কারণে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন দরিদ্রসহ বর্তমানে দেশের দারিদ্রের হার ৪২%। এছাড়া এখনো আয়মূলক কর্মহীন ১৭% পরিবার রয়েছে। আর কর্মক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারীরা। অপরদিকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে করোনাকালে যে নগদ আর্থিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে তাও খুবই নগণ্য।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্স সেন্টার (পিপিআরসি)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স এড ডেভেলপমেন্ট (বিএইজিডি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিকে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়েছিল, বিশেষত দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষগুলো। বিআইজিডি ও পিপিআরসি’র, যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে মহামারীর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রভাব এতদিন পরেও খুব কম মানুষই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। গবেষণাটিতে গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। প্রথম জরিপ হয় এপ্রিল মাসে এবং দ্বিতীয়বার গত জুন মাসে।

গবেষণায় দেখা যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক কাজ হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোনো পেশায় পুরুষদের তুলনায় নারীদের ওপর অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যেমন জুন মাসে অর্ধেকেরও বেশি নারী গৃহকর্মী কোনো কাজ খুঁজে পায়নি।
মহামারী শুরুর হওয়ার একমাস পর এপ্রিলে গ্রামে ৫০% এবং বস্তি এলাকার মাত্র ৩২% পরিবার কোনোরকম আয়মূলক কাজে জড়িত ছিল। লকডাউন তুলে দেওয়ার পর অনেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছে, তাই জুন মাসে এর হার যথাক্রমে ৮৩% ও ৮৪% এ উন্নীত হয়েছে। তবে অনেকে কাজ ফিরে পেলেও তাদের আয় খুব বাড়েনি। মহামারীর শুরুতে তাদের মাথাপিছু গড় আয় অনেক নেমে এসেছিলো, জুন মাসে সেখান থেকে তাদের আয় সামান্যই বেড়েছে, যা এখনো প্রাক-মহামারী পর্যায়ের অনেক নিচে। এখনো ১৭% পরিবারের কোনো আয়মূলক কাজ নেই।
আয় যে এখনো কম সেটা বোঝা গেছে তাদের খাবারের তথ্য থেকে। জন প্রতি খাওয়ার খরচ করোনাভাইরাস আঘাত হানার পরপর আগের চেয়ে অনেক নিচে নেমে এসেছিলো। জুন মাসে সেখান থেকে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। জুনেও প্রায় ৩০% পরিবার অর্থাভাবে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলো, আবারও করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে এই ক্ষেত্রে উন্নতি খুব সামান্য। করোনার আগে প্রায় সবাই তিন বেলা খেত, জুন নাগাদ বস্তি এলাকায় ১১% ও গ্রামে ৬% পরিবার তিন বেলা খেতে পারছিল না, ঢাকায় এই হার ১৫%। বেশিরভাগ বস্তি এলাকার পরিবারগুলো মার্চ থেকে কোনো মাংস বা দুধ খেতে পারছে না। সবকিছু মিলে ব্যাপকভাবে তৈরি হয়েছে হিডেন হাঙ্গার, বা গোপন ক্ষুধা। এই অবস্থা শিশু ও ছোট ছেলেমেয়েদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এপ্রিল মাসের জরিপে আমরা দেখেছিলাম, প্রায় দরিদ্র যাদের মাথাপিছু আয় প্রাক-করোনাকালীন সময়ে দারিদ্রসীমার ওপরে কিন্তু মিডিয়ান আয়ের নীচে ছিল, তাদের মধ্যে ৭৩% এর আয় দারিদ্রসীমার অনেক নীচে চলে এসেছিল। আমরা তাদের বলছিলাম বাংলাদেশ নব্য-দরিদ্র। জুন মাসেও এই নব্য-দরিদ্রেদের প্রায় সবার আয় ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই নব্য-দরিদ্রদের হিসাবে ধরলে, বর্তমানে বাংলাদেশের দারিদ্রের হার হয় ৪২%।
শহরের বস্তি এলাকায় করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব হয়েছে আরো মারাত্বক। শহরে খাবারের বাইরেও অন্যান্য বাবদ খরচ, যেমন বাড়িভাড়া, বিভিন্ন বিল, যতায়াত খরচ অনেক বেশি। এসব খরচ মেটাতে না পেরে শহরের দরিদ্ররা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। যেমন ঢাকার ১৬% ও চট্টগ্রামের ৮% বস্তি এলাকার মানুষ অন্য জেলায় চলে গেছে।
এই গবেষণা থেকে এটা পরিষ্কার, এই মহামারী আমাদের দেশে দারিদ্রের বিস্তার ও প্রকৃতি দুটোই পাল্টে দিচ্ছে।
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, লোকজন কাজ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার জন্য তাকে একটা পরিবেশ পেতে হবে যেখানে সে সাহস পাবে। আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য নতুন ন্যাশনাল মুড প্রয়োজন।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, আমরা আমাদের গবেষণা থেকে কর্মহীনতার অন্যতম যে ফলাফল পেয়েছি তা হলো ফেমিনাইজেশান। নারীপ্রধান কর্মক্ষেত্র যেমন গৃহকর্মী খাত, সেখানে নারীরা কর্মহীনতার শিকার হয়েছে ব্যাপকভাবে। শুধু তাই নয়, আমরা দেখেছি, যেখানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে, সেখানেও এই সময়ে নারীদের অবস্থা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় বেশি খারাপ।’
সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিএইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিনসহ গবেষক দল ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট