চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ফ্লাইওভারের নিচে পে-পার্কিং: সিএমপি’র আপত্তি

নাজিম মুহাম্মদ

১৭ আগস্ট, ২০২০ | ১:২৮ অপরাহ্ণ

আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে সড়কের মাঝখানে টাকার বিনিময়ে পার্কিং প্রদান করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। সড়কের মাঝখানে পে- পার্কিংয়ের আপত্তি জানিয়ে কর্পোরেশনের কাছে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বর্তমানে পার্কিংয়ের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।
এর আগে ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে পার্কিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তখন নগর পরিকল্পনাবিদ ও ট্রাফিক পুলিশের আপত্তির মুখে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, সিডিএর কাছ থেকে বুঝে নেয়ার পর আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ট্রেড ম্যাক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে চসিক। প্রতি বছর এক কোটি টাকা করে সিটি কর্পোরেশনকে রাজস্ব দেবে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিময়ে ফ্লাইওভারের বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল বিলবোর্ড ও সড়কের নিচে পার্কিং ভাড়া দেবে ট্রেড ম্যাক্স। সড়কে ‘পে-পার্কিং’ করা হলেও ট্রাফিক পুলিশের কোনো মতামত নেয়নি ঠিকাদার কিংবা চসিক।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এস এম মোস্তাক আহমদ জানান, সড়কের মাঝে পে পার্কিং না করার অনুরোধ জানিয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কাছে কয়েকদিন আগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন জানান, সড়কের মাঝখানে পে-পার্কিং না করার ব্যাপারে নগর পুলিশ একটি চিঠি দিয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি কয়দিন হলো। চিঠির বিস্তারিত পড়ে দেখিনি। তবে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করতে দেয়া হবে না।
সংশ্লিষ্টসুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে, ওয়াসা মোড়, সিডিএ রাস্তার পাশে, নিউমার্কেট এলাকাসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পে-পার্কিং এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। গুরুত্বপূর্ণ এই সকল স্থানে পে-পার্কিং প্রদান করা হলে কিছু প্রতিষ্ঠান সর্বদা পে-পার্কিং এ গাড়ি রেখে স্থায়ীভাবে রাস্তাকে নিজেদের পার্কিং স্থান হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি কিছু কিছু রাস্তা সরু হওয়ায় ঐ সকল রাস্তায় পে-পার্কিং প্রদান করলে গাড়ি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাবে না। এতে অনেক গাড়ি এবং গণপরিবহন পার্কিংয়ের স্থান না পেয়ে এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং করবে, যার ফলে অতিরিক্ত যানজট এবং জনভোগান্তির সৃষ্টি হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সকল সড়কে পে-পার্কিং প্রদান করলে ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্ট হবে এবং তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম মহানগরীর রাস্তার উল্লেখযোগ্য অংশ অল্পবৃষ্টিতে ডুবে যায় এবং গাড়ি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। রাস্তায় পে-পার্কিং প্রদান করা হলে বৃষ্টির সময় বা বর্ষাকালের চরম যানজটের সৃষ্টি হবে যা নিরসন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ট্রেড ম্যাক্সের স্বত্বাধিকারী হেলাল আহমেদ বলেন, ওয়াসা থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নীচে ফাঁকাস্থানগুলোতে পে-পার্কিং করার কথা রয়েছে। এছাড়া পরিকল্পিত বাগানও করা হবে। বিনিময়ে ট্রাইভিশন, এলইডির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার ও পার্কিং থেকে আয় করা হবে। ইতিমধ্যে কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কয়দিন আগে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে কর্পোরেশনের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ফ্লাইওভারের নীচে সড়কের মাঝখানে গাড়ি পার্কিং করা হলে যানজট বাড়বে। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ট্রাফিকের চিঠির পর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুমোদন নেয়ার সময় সরকারি কর ছাড়া এক কোটি ৭০ লাখ টাকা কর্পোরেশনকে প্রদান করেছেন ট্রেড ম্যাক্স।
হেলাল বলেন, পে-পার্কিংয়ের জন্য অটোমেটিক মেশিন আমদানির পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে লোকজনও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে যেখানে পার্কিং করা হবে, সেখানে এখন এমনিতেই লোকজন গাড়ি রাখে। পে-পার্কিং হলে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি রাখবে। পাশাপাশি জায়গাটাও পরিষ্কার থাকবে।
সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম জানান, নগর পুলিশের পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। এতে বলা হয়েছে, সড়কের মাঝখানে পে-পার্কিং করা হলে ট্রাফিকের শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট