চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত: কড়াকড়ি শুধু মূল পয়েন্টেই

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত: কড়াকড়ি শুধু মূল পয়েন্টেই

আল-আমিন সিকদার

১৭ আগস্ট, ২০২০ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমেই বন্ধ করা হয় চট্টগ্রামের বিনোদন স্পটগুলো। জনসমাগম ঠেকাতে সরকারের এই নির্দেশনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে এগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। প্রথম দিকে জনসামগম কম ঘটলেও লকডাউন শিথিলের পর পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে সৈকতে। দিন দিন বাড়ছে সৈকত পাড়ে পর্যটকদের ভিড়। তবে এখনো সৈকতের মূল পয়েন্টে প্রবেশ করতে পারছে না দর্শনার্থীরা। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ মূল পয়েন্টে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে না পারলেও সৈকত চষে বেড়াচ্ছেন অন্যদিক দিয়ে। এতে করে আইন অমান্য করে ভ্রমণ পিপাসুরা তাদের পিপাসা মেটালেও এখনও কষ্টে দিন কাটাচ্ছে এই সৈকত ঘিরে জীবিকা-নির্বাহ করা মানুষগুলো। কারণ, দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ রয়েছে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। পর্যটকরা আইন অমান্য করে প্রবেশ করলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন না সৈকত নির্ভর এসব মানুষগুলো। তাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ মানুষগুলো চাইছেন সৈকতে সকলের প্রবেশের অনুমতি। তারা আক্ষেপের সুরে দিচ্ছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উদাহরণ। বলছেন, করোনার দোহাই দিয়ে কেন বন্ধ রাখা হয়েছে সৈকতের মূল পয়েন্ট।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই করছেন দিনমজুরের কাজ। কেউ কেউ নিজের দোকান থাকা সত্বেও পাওনা পরিশোধ ও পরিবারের তাগিদে রাস্তার পাশে বিক্রি করছেন সবজি। অনেকে আবার পেশা বদলে চালাচ্ছেন রিক্শা। শুধু তাই নয়, একসময় সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষগুলোর ক্লান্তি দূর করতে খাবার তুলে দিতেন যারা, তারাই আজ ভুগছেন খাবার সংকটে। মনে পড়ে, বিচে আসামাত্র হাতে বড় বড় ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়া যুবকগুলোর কথা। তারাও আজ রয়েছেন অর্থ সংকটে। এদের মধ্যে কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহে সাহায্যের হাত পাতলেও অনেকেই লজ্জায় বলছেন না কষ্টের কথা।
গতকাল (শনিবার) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনকালে প্রতিবেদককে নিজেদের এমন পরিস্থিতির কথা জানান সৈকত পাড়ের মানুষগুলো।
বিচ মার্কেটে আচার বিক্রি করে সংসারের যাবতীয় খরচের যোগান দেন আনোয়ার। কিন্তু টানা দোকান বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে ভুগছেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আচারের দোকানটাই আমার একমাত্র সম্বল। অনেক টাকা দেনা করে দোকান দিয়েছি। কিন্তু এখন একটানা ৫ মাস দোকান বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কখনো কখনো ভাতের সাথে একটা ডিম বা ডাল থাকলেও। কখনো কখনো খেতে হয় শুধু ডাল দিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকে টাকার অভাবে অন্যকাজ করছেন। কেউ সবজি বিক্রি করছেন আবার কেউবা দিনমজুর হিসেবে ফসল তোলার কাজ করছেন। লকডাউন ও কাজের স্বল্পতার কারণে সবাই কাজের সুযোগও পাচ্ছেন না। যেহেতু সবকিছু শিথিল করে দেয়া হয়েছে, আমাদের সৈকতও খুলে দেয়া হউক। কক্সবাজারেও দেখছি প্রচুর পর্যটক যাচ্ছে। এখানেও আসছে। শুধুমাত্র মূল পয়েন্টে প্রবেশ করতে পারছে না। যেহেতু মানুষ এখন করোনার ভয় জয় করে ঘুরে বেড়াতে চাচ্ছে, সেহেতু তাদের সেই সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি আমাদেরও বাঁচার সুযোগ করে দেয়া হউক। অন্যথায় সরকার থেকে আমাদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা হউক। না হলে আমাদের বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে’।
আনোয়ারের মত না খেয়ে দিন কাটানোর কথা জানালেন ছবিওয়ালা ফারুকও। তিনিও সৈকত খুলে দেয়ার আকুতি জানান।
একই দাবি জানান বিচ কমিউনিটি পুলিশ ও স্পিডবোট সার্ভিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুসা আলম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রায় ৫ মাস হলো সৈকতে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ। বন্ধ দোকান-পাটও। এতে করে সৈকত নির্ভর মানুষগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকবার ত্রাণ দিলেও সেগুলো চাহিদার তুলনায় কিছুই নয়। আমরা এ সংকট মোকাবেলায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি’।
এদিকে আগামী দুই থেকে চার দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ বিষয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। আশাকরছি আগামী দু-চার দিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা আমাদের ওপেনিয়ন জানিয়েছি’।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট