চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাড়ছে গরু, ভিড়ছে না ক্রেতা

নূরনগর হাউজিং মাঠ

বাড়ছে গরু, ভিড়ছে না ক্রেতা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৮ জুলাই, ২০২০ | ২:০৪ অপরাহ্ণ

পূর্ব বাকলিয়া কালামিয়া বাজার এলাকার ‘বড় মিয়া’ এখন কোরবানির পশুর হাটে। গরুটি খাইনে বাধার পর থেকে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগেই রয়েছে। বড় মিয়ার পাশে রয়েছে সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে আনা মানিক রাজা ও বাংলার বাঘ। হাটের সবচেয়ে বড় তিনটি গরু দেখতে যত ভিড়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিককে। কালো-বাদামিমিশ্রিত রঙের বড় মিয়াকে গতকাল বিকেলে নগরীর নূরনগর গরুর বাজারে আনা হয়েছে। দাম হাঁকা হচ্ছে ১২ লাখ টাকা।

অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিশিয়ান জাতের গরুটি বিকেল ৩টার দিকে বাজারে এনেছেন কালামিয়া বাজার এলাকার সেকান্দর চেয়ারম্যান বাড়ির হাজি আনোয়ার ডেইরি ফার্মের মালিক মোহাম্মদ ইমরান। এখন গরুটির দাম হাঁকাচ্ছেন ১২ লাখ টাকা।

মোহাম্মদ ইমরান পূর্বকোণকে বলেন, ‘গরুটি পটিয়া থেকে কিনেছি। এক বছর ধরে লালন পালন করে বড় করেছি। খামারে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়েছিলেন ক্রেতারা।’

মোহাম্মদ ইমরান কোরবানির হাটে বিক্রির লক্ষ্যে ৪০টি গরু লালন-পালন করেছেন। শুধু বড় গরুটি হাটে এনেছেন। অন্যগুলো খামারেই বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত ২০টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি।

শুধু বড় মিয়া নয়, পাশে আছে মানিক রাজা ও বাংলার বাঘ। বাজারের সবচেয়ে বড় তিনটি গরু ঘিরে রয়েছে মানুষের ভিড়।

গতকাল সোমবার বিকেলে নূরনগর হাউজিং গরুর মাঠে দেখা যায়, প্রচুর গরু রয়েছে। তবে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি। বড় গরুর সংখ্যাও কম নয়। নগরী ও জেলার বিভিন্ন খামারি, বেপারিরা গরু এনেছেন বিক্রির জন্য। তবে বেচাবিক্রি জমে ওঠেনি।

সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের মুহাম্মদ আমিরখীল মাওলানা আব্দুল আজিজ এগ্রো বাজারে এনেছেন মানিক রাজা ও বাংলার বাঘ।
মাওলানা মো. আবদুল আজিজ বলেন, ‘গরুগুলো শখ করে কিনেছিলাম। তিন বছর ধরে বাড়িতেই লালন-পালন করেছি। একটি ভুটানি ও অন্যটি পাকিস্তানি জাতের।’ মানিক রাজা ২৫ লাখ টাকা ও বাংলার বাঘ ২২ লাখ টাকার দাম হাঁকিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, মানিক রাজার ওজন এক টনের বেশি হবে। বাংলার বাঘও প্রায় সমান ওজনের। তবে বাংলার বাঘের চেয়ে মানিক রাজা সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট। তাই দামও বেশি।
দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন খামারিরা নিজস্ব লালন পালন করা গরু এনেছেন বাজারে। বেশির ভাগই দেশীয় খামারে লালন-পালন করা বিভিন্ন খামারের গরু। তবে কুষ্টিয়া, চাপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার গরুও রয়েছে বাজারে।
কালা চাঁদ ও ছোট মিয়ার বাহাদুরি চলছে নগরীর অস্থায়ী পশুর হাট নূরনগর হাউজিং গরুর মাঠে। কালা চাঁদের দাম হাঁকা হচ্ছে ৬ লাখ টাকা। খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলার এক খামারি। ওই খামারি বলেন, নিজের খামারে ৫টি গরু লালন-পালন করেছেন। ৫টি গরুই নূরনগর হাউজিং মাঠে বিক্রির জন্য এনেছেন। বিক্রি করেছেন মাত্র একটি। অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের কালা চাঁদের দাম ৬ লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন।
সাতকানিয়ার চরতী গ্রামের বদিউল আলম তিনটি বড় আকারের গরু এনেছেন। নাদুস-নুদুস গরুগুলো দেখতেই মন ভরে যায়। কোরবানির জন্য নিজেরা লালন-পালন করেছেন। একটি তিন লাখ টাকা ও অপর দুটির দাম দুই লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকা দর তোলেন।
বাঁশখালীর বেপারি কামাল হোসেন, সৈয়দ মিয়া। পেশায় কৃষিজীবী। পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য গরু লালন-পালন করেন। এক-দুজন করে পাঁচজন মিলে ১৩টি গরু এনেছেন। কয়েক বছর ধরে গরুর দাম বাড়তি থাকায় দামও ভালো পেয়েছেন। তবে এবার দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু দক্ষিণ বা উত্তর চট্টগ্রামের উপজেলার বেপারি নয়, দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেপারিরাও গরু এনেছেন। সীমান্তবর্তী উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ী, বেপারিরা এবার বাজারে প্রচুর গরু এনেছেন।
বাজার ঘুরে দেখা বিশাল মাঠজুড়ে খুঁটি, শামিয়ানা, ত্রিপল খাটিয়ে খাইন বানানো হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসার বিক্রেতারা খাইনের পাশেই ঘরবসতি গড়ে তুলেছেন। মাচাং বানিয়ে থাকা, রান্নাবান্না করা ও খাওয়ার কাজ চলছে।

বাজারে পুলিশ ক্যাম্প, বিভিন্ন ব্যাংকের জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন ও ভেটেরিনারি ক্যাম্প বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও নিরাপত্তায় কাজ করতে দেখা গেছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট