চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

৩ প্রতারকের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন

ওরা কখনো পুলিশ সুপার কখনো কাস্টমস কর্মকর্তা

নাজিম মুহাম্মদ

২৭ জুলাই, ২০২০ | ৪:১৮ অপরাহ্ণ

তারা কখনো পুলিশ সুপার কখনো কাস্টমস কর্মকর্তা আবার কখনো সেনা কমকর্তা। কাস্টম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে যত ধরনের প্রক্রিয়া থাকে সবই তারা করতে পারে। লোভনীয় চাকরি দেয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই-মেট্টো)। তদন্তশেষে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ এনে সম্প্রতি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পিবিআই।
‘গুণধর’ তিন ব্যক্তি হলেন, ঝালকাঠির রাজাপুর থানার কৈবর্তখালী গ্রামের মজনু সিকদারের ছেলে রিপন সিকদার (৩০), ফেনীর পরশুরাম থানার সালামত আলি চৌধুরী বাড়ির মোস্তফা চৌধুরীর ছেলে আনোয়ারুল হোসেন ওরফে আতিকুর রহমান চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৫৪)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র, প্রবেশপত্র, বিভিন্ন নিয়োগের প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, পুলিশ সুপারের কাছে প্রেরিত ভেরিফিকেশন পত্র, অফিসিয়াল চিঠি প্রেরণের নমুনাখামসহ সবকিছুই তারা নিজেরাই তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন হোটেলে এনে নিয়োগপ্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষাও নেয়। টাকা বুঝে নেয়ার পর নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের সামনে নিয়োগ প্রার্থীকে নিয়োগপত্র বুঝিয়ে দিয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।

ধরা পড়ার পর অভিনব কায়দায় প্রতারণার কথা স্বীকার করে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আতিকুর রহমান দাবি করেন, সরকারি চাকরি দেয়ার কথা বলে, তার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়েছিলো সরকারি একটি সংস্থার একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু ওই কর্মকর্তা চাকরিও দেয়নি টাকাও ফেরত দেয়নি। পরবর্তীতে আতিকুর ছদ্মনাম ধারণ করে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতারণার কাজটি খুবই নিখুঁতভাবে করেন আতিক। সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করা, নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানের সই করা প্রবেশপত্র দেয়া, লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়। সব প্রক্রিয়াশেষে নিয়োগপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী যখন চাকরিতে যোগ দিতে যান, তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ততক্ষণে আতিক মোবাইল বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। প্রতারণা করার সময় নিজেকে আনোয়ার হিসাবে পরিচয় দিতেন তিনি। চট্টগ্রাম কাস্টমস, এনবিআর ও সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫২ জনের কাছে নিয়োগপত্রও পাঠিয়েছে আনোয়ার।

তফাজ্জল নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এনবিআর, কাস্টমস, বন্দর ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরির নকল আবেদনপত্র প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করাতো। চাকুরি প্রার্থীদের নকল প্রবেশপত্র, ভুয়া প্রশ্ন, উত্তরপত্রও দিতো। পরবর্তীতে ভুয়া রেজাল্টশিট তৈরি করা হতো। চাকরি প্রার্থীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাগজও পাঠাতো। সব টাকা হাতে পাওয়া পর ডাকাযোগে প্রার্থীদের বাড়ির ঠিকানায় ভুয়া নিয়োগপত্র পাঠিয়ে মোবাইলটি বন্ধ করে দিতো। এ ধরনের ভুয়া নিয়োগপত্র পেয়ে মেজবাহ নামে একজন চট্টগ্রামে আসেন। তাকে দিয়ে একটি ফরম পূরণ করে চাকরিতে যোগদানের জন্য কাস্টমস হাউজে ঢুকিয়ে দিয়ে তারা সরে যান।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট