চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘হাতের নাগালে’ গরুর দাম

সাগরিকা গরুর বাজার

‘হাতের নাগালে’ গরুর দাম

আল-আমিন সিকদার

২৭ জুলাই, ২০২০ | ২:০৪ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর মূলমন্ত্র সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা শুরুতেই ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী চলেছে মাসের পর মাস লকডাউন। যা চলমান ছিল বাংলাদেশেও। এ লকডাউনের প্রভাব যেমন পড়েছে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে তেমনি কোরবানির পশুর বাজারেও।
সরকার অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে লকডাউন তুলে নিলেও চলাচলে এখনও রেখেছেন সীমাবদ্ধতা। কারণ, করোনা তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে এখনও। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শুরু থেকে এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে জনসমাগম হয় এমন সবকিছু। যে কারণে এখনও বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি সেন্টারগুলো। ফলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বিয়ে, মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। যার প্রভাব পড়েছে এবারের কোরবানির বাজারে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিনিয়ত গরু ও ছাগলের প্রয়োজন হলেও গত ৪ মাসে বিক্রি হয়নি কোন পশু। যার কারণে গরু রয়ে গেছে খামারিদের। তাই বাজারে উঠেছে প্রচুর কোরবানির পশু। ব্যবসায়ীরা এবারে গরু বিক্রিতে যেমন লোকসানের আশঙ্কা করছেন, তেমনি গরুর দামও হাতের নাগালে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেতারা।

গতকাল স্থায়ী পশুর হাট সাগরিকা বাজার সরেজমিন পরিদর্শনে উঠে আসে এমন তথ্য। হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু এসেছে বাজারটিতে। এখনও ঢুকছে ট্রাকে ট্রাকে গরু। সব মিলিয়ে গতবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি গরু এসেছে হাটে। অন্যদিকে হাটটিতে প্রবেশ পথে ক্রেতাদের মাস্ক বিতরণ করতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবকদের। বসানো হয়েছে ডিজ ইনফেকশন গেট। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এতকিছুর আয়োজন থাকলেও হাটে দেখা মেলেনি ক্রেতাদের তেমন সমাগম। তারপরও গরু ক্রয় করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেক ক্রেতাকে। হাট ইজারাদারদের দাবি গত কয়েকদিনের তুলনায় ক্রেতা সমাগম কিছুটা বেড়েছে। গতকাল (রবিবার) রাত ৮টা পর্যন্ত হাটে গরু বিক্রি হয়েছে ৬৫টি। যারা ক্রয় করেছেন তারা সকলেই বলেছেন এবারের বাজারে গরুর দাম হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে।

১ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় একটি গরু ক্রয় করেন দিদারুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। দামও হাতের নাগালে। যে গরুটি এবার আমি কিনলাম সেটাতে কম করে হলেও ১৮ মন মাংস হবে। গতবার একই ওজনের গরু কিনেছি ২ লাখ টাকায়। বিয়ে, মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে। আর খরচ পোষাতে না পেরে গরু বেপারিরা সামান্য কিছু লাভ করেই গরু ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা না করার কারণ হচ্ছে, গরুর সংকট দেখা দিলে দাম আবারও বাড়তে পারে’। তবে এখনও পর্যন্ত দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে ক্রেতাদের কাছে কসাইয়ের চেয়েও কম মূল্যে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মো. ফিরোজ নামে এক খামার ব্যবসায়ী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এবার বাজারে গরু বেশি, ক্রেতা কম।

করোনাভাইরাসের কারণে গরু বিক্রি কম হবে এটা আগে থেকেই ধারণা ছিল। তাই এবার মাত্র ৭০টি গরু তুলেছি হাটে। গতবছর এক’শরও বেশি গরু বিক্রি করেছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু সংগ্রহ করে খামারে রেখে লালন-পালনের পর এখন যে দাম পাচ্ছি এতে প্রচুর লোকসান গুনতে হবে। ২০ মন ওজনের একটি গরু কসাইরা আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত ক্রয় করে ২ লাখ টাকা দিয়ে। কিন্তু এ গরু বিক্রি করেছি মাত্র ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। গরু প্রতি ১০ হাজার টাকা কম গতবারের তুলনায়। এবার মনে হচ্ছে ভালোই লোকসান গুনতে হবে’।

হাট ইজারাদার সুলতান পূর্বকোণকে বলেন, ‘সাগরিকা পশুর হাট চট্টগ্রামের স্থায়ী পশুর হাট। প্রতিবছর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি পশু উঠে এই হাটটিতে। গতবার ২০ হাজার গরু উঠলেও এবার আরও বেশি গরু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরইমধ্যে প্রচুর গরু এসেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তবে বেচা-বিক্রি এখনও খুব একটা শুরু হয়নি। কিছুটা জমে উঠেছে বলা যায়। আজ (গত রবিবার) এখন পর্যন্ত ৬৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। আশা করছি শেষ কয়েকদিন প্রচুর গরু বিক্রি হবে। কারণ, চট্টগ্রামে শেষ দিকেই গরু বিক্রি বেশি হয়’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট