চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরকারের সুদৃষ্টি কামনা

কামারপল্লীতে নেই হাপরের আওয়াজ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৩ জুলাই, ২০২০ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

দোকানে থরে থরে সাজানো ঝকঝকে নতুন ধারালো দা, বটি, বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ছুরি ও চাপাতি। ভেতরেই বসে দোকানিরা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দোকানে নেই কোনো ব্যস্ততা, নেই কাজের তাড়া। কামারের দোকানের অতি পরিচিত সেই টুংটাং শব্দ ও হাপরের ফোঁস ফোঁস আওয়াজ নেই কামারপল্লীতে।

আর কয়েকদিন পরই আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিবছর এ ঈদকে সামনে রেখে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকে নানা ব্যস্ততা। কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জাম কেনাবেচাও হয়ে থাকে বেশ। দা-ছুরি শান দেয়ার জন্য প্রায় সবাই ছুটে যান কামারের কাছে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কামারের দোকানের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কামারের দোকানে নেই কোনো ব্যস্ততা। নেই ক্রেতার ভিড়। ঈদুল ফিতরের মতই কোনো আয়োজন ছাড়াই যেন নিরবে কাটতে যাচ্ছে কোরবানির ঈদও।

চকবাজার, দুই নম্বর গেট, নিউমার্কেট ও বহদ্দারহাট এলাকায় রয়েছে কামারের দোকান। সরেজমিনে এ সব দোকানে গিয়ে দেখা যায় অলস সময় কাটাচ্ছেন কামাররা। কামারের দোকানে আগের সেই পরিচিত টুংটাং শব্দ এখন আর শোনা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে না লোহা আগুনের শিখায় পুড়িয়ে রাখতে। কামার পাড়ার এ চিত্র শুধু কামাররা একাই নয়, মিস করছে কামারের আশপাশের মানুষরাও।
কথা হয় নগরীর চকবাজার কামার পট্টির রঞ্জিত কর্মকার ও শিবুর সাথে। তাঁরা বলেন, এ এলাকায় শুধু চারটা দোকান আছে। যেহেতু এখানে অল্প কিছু দোকান আছে সেহেতু কোরবানির এ সময় আমরা খুব ব্যস্ত থাকি। একা কাজ শেষ করে পারি না। তাই দোকানে হেল্পার রাখতে হয়। কিন্তু এ বছর একার কাজও নেই কি মানুষ রাখবো। প্রতিদিন সকালে দোকান খুলি আর মনে মনে বলি আজ যেন কিছু কাজ পাই। কিন্তু দেখতে দেখতে দিনশেষে রাত হয়ে যায় কাজ আসে না। তবে এর মধ্যে কিছু ছুরি ও কয়েকটা পুরাতন দা শান দিয়েছি। জানি না সামনে কয়েক দিনে কি হয়। এ দিয়ে কি আর সংসার চলে।

ষোলশহরের কামাররা বলেন, প্রতিদিনের মত নিয়ম করে সকালে দোকান খুলছি আর সাতটায় বন্ধ করছি। সারাদিন দোকানে বসে থাকি। নেই কোনো কাজের তাড়া। অন্যান্য বছরের কোরবানির ঈদ আর এবারের কোরবানির ঈদের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। আমরা সারা বছর কাজ পাইনা বললেই চলে। কিন্তু কোরবানির পনের থেকে বিশ দিন আগে থেকেই আমাদের কাজের খুব চাপ থাকে। বলতে গেলে এ এক মাসেই সারা বছরের আয় হয়। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের কাজের এই একটা মাসও নষ্ট হয়ে গেছে। এমনিতে সারা বছর টেনেটুনে চলে সংসার। এছাড়া এবছর কোনো মেলা পর্যন্ত হয়নি। আমাদের আয়ের আরেকটা ভালো জায়গা হচ্ছে মেলা। সারাবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলায় অংশগ্রহণ করি। এতে ভালো আয় হতো। এছাড়া মেলার সময় ছাড়া ও ঈদের আগে কামারের কাজের পাশাপাশি অনেক সিজনার কাজ করি। তবে এটি আমাদের বাপ দাদা থেকে প্রাপ্ত কাজ। করোনার কারণে সবাই কম বেশি সমস্যায় রয়েছে। আর সরকারও সবাইকে কমবেশি অনুদানও দিয়েছে। আমারাওতো সেই সমস্যার আছি। সারাবছরের অপেক্ষা আমাদেরও নষ্ট হয়েছে। তাই এবারের ঈদুল আজহায় সরকারকে আমাদের দিকে তাকানো উচিৎ বলে মনে করি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট