চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

মেঘনার মোহনায় খসকি জালের ছড়াছড়ি

মেঘনার মোহনায় খসকি জালের ছড়াছড়ি

সন্দ্বীপ সংবাদদাতা

১৮ জুলাই, ২০২০ | ১১:২৫ অপরাহ্ণ

সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ জাল ব্যবহার করে নিয়মিত ইলিশ মাছ শিকার করছেন নোয়াখালীর কিছু চিহ্নিত জেলে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পশ্চিমে মেঘনার মোহনা ও ভাষাণচরের কূল ঘেঁষে অবৈধ খসকি জাল দিয়ে এসব মাছ ধরছেন তারা। তাদের সাথে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। নদীতে অবৈধ জালের ব্যবহার ও মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও এসব খসকি জালের বিষয়ে নিশ্চুপ উপজেলা মৎস্য অফিস ও কোস্টগার্ডের স্থানীয় কন্টিনজেন্ট।

উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের বাংলাবাজার ও গাছতলীর হাট ইলিশ ঘাটের স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্দ্বীপের পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার দূরে ভাষাণচরের কূল জুড়ে পাতা হয়েছে বেশ কয়েকটি খসকি জাল। প্রতিটি জালের আয়তন ৪ থেকে ৭ কিলোমিটার লম্বা। ভাষাণচরের উত্তরে শেষ সীমানা থেকে আরো ৪-৬ কিলোমিটার উত্তরের ডুবোচর থেকে শুরু করে দক্ষিণের শেষ সীমানার পরেও প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দক্ষিণ সীমানার ডুবোচর পর্যন্ত এসব জাল পাতা রয়েছে। চরের নরম মাটিতে ৮-১০ হাত দূরত্বে প্রতিটি ৬-৮ হাত লম্বা খুঁটি পুঁতে জাল বেধে খসকি জাল বসানো হয়। নদীর কূল থেকে শুরু করে ভাটায় যেখান পর্যন্ত পানি শুকিয়ে যায় সে পর্যন্ত এসব জাল পাতা হয়। ভাষাণচরে বন বিভাগের লাগানো কেওড়া গাছ কেটে এসব জালের খুঁটি বানানো হয়। বেশীরভাগ সময় খসকি জালের খুঁটির সাথে জেলেদের ইলিশের জাল পেঁচিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি খুঁটির সাথে ধাক্কা লেগে জেলে নৌকা ফুটো হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার (১৮ জুলাই) সকাল ৯টায় কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের অধীনে সারিকাইত কন্টিনজেন্ট ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বাংলাবাজার ঘাটে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে অদৃশ্য কারণে অভিযান না করেই ফিরে আসেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, নদীতে খসকি জাল পাতার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। জাল কাটতে লোকজনের জন্য আমি বাংলাবাজার ঘাট ইজারাদারের সাথে কথা বলেছি। তিনি (ইজারাদার) আসেননি। তাছাড়া নদীতে জোয়ার থাকায় আমি ফিরে যাচ্ছি। ভাটার সময় আবার আসব। তবে কোস্টগার্ড তাদের নিয়মিত অভিযানে নদীতে নামলেও ভাটা নামার পড়েও মৎস কর্মকর্তার দেখা মিলেনি।

জানা যায়, নোয়াখালীর রহমান মাঝি, আলাউদ্দিন মাঝিসহ সন্দ্বীপের কয়েকজন প্রভাবশালীরা ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে এসব খসকি জাল বসিয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরা বন্ধের সময়ও ইলিশ মাছ ধরছে তারা। প্রতিটি খসকি জালে ৫০-৭০ জনের দল জাল পাহারায় থাকে। কখনো আবার স্থানীয় জেলেদের উপর হামলা করে তারা। সন্দ্বীপের চারপাশেও এসব খসকি জাল দিয়ে প্রতিবছর মাছ ধরা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোস্টগার্ড ভাষাণচরের আশপাশ থেকে প্রতিদিন ইলিশ জাল ও মাছ উদ্ধার করলেও অদৃশ্য কারণে অভিযানে যাওয়ার পথে সামনে থাকা এসব খসকি জালের বিষয়ে তারা নিশ্চুপ।

খসকি জালের বিষয়ে জানতে চাইলে সারিকাইত কন্টিনজেন্ট কমান্ডার খসকি জালের বিষয়টি তাদের জানা আছে বলে স্বীকার করেন। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া কোন কথা বলতে রাজি হননি।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/নরোত্তম-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট