চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মানুষও দ্বিগুণ, ভাড়াও দ্বিগুণ!

আল-আমিন সিকদার

১৭ জুলাই, ২০২০ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

সরকার লকডাউন শিথিলের পর সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করার ঘোষণা দেন। তবে সড়কে গণপরিবহন নামানোর আগে নিশ্চিত করতে হবে যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। তাই নগরীর সড়কে গাড়ি নামানোর আগে গণপরিবহন মালিকদের সাথে বৈঠক করে ১৬ নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক।

যেখানে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনের চালক-সহকারীর মাস্ক বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি যাত্রীদের সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়। যদিও এজন্য সরকার গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু এসব নির্দেশনা যেন আমলেই নিচ্ছে না গণপরিবহন। সড়কে গাড়ি নামানোর পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে পড়েন তারা। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিততো দূরে থাক উল্টো হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন তারা। ভাড়া বাড়লেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের লোভে সিটের দ্বিগুণ যাত্রী তোলা হচ্ছে। এমনকি যাত্রীদের হাতে যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিটানো হত সেগুলোও নকল বলে প্রমাণিত হয়েছে গণপরিবহনে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে। এতে করে করোনার চরম ঝুঁকিতে পড়ছে যাত্রীরা।

বিষয়টি নিয়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। গত বুধবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে এমনই একটি পোস্ট করেন সজীব মুহুরি নামে এক যুবক। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, সরকার সাধারণ মানুষ ও গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট সকলের কথা ভেবে গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি ৬০ শতাংশ ভাড়াও বৃদ্ধি করেন। কিন্তু গণপরিবহন অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে যাত্রী তুলছেন দ্বিগুণ হারে। যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহবান জানান এই যুবক।

সজীব মুহুরি নামে ওই যুবক তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘কথা ছিলো ২ সিটে একজন তবে সেক্ষেত্রে ভাড়াটা বাড়িয়ে নেয়া হবে!, কিন্তু চট্টগ্রামের পুরো চিত্র উল্টো। সন্ধ্যা হলেই রাস্তায় মানুষের ঢল নেমে যায়। আমাদের জনসংখ্যা এমনি, আসলে সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই, স্রষ্টার উপর ভরসা রেখে একজনকে একজন সেক্রিফাইস করে পাশাপাশি বসতেই হবে। অন্যথা ৭ টায় কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে ১১ টা বেজে যাবে, দিনের অর্ধেকটা সময় বিলিয়ে দিতে হবে রাস্তায়। আমার কথা হচ্ছে, মানুষ যখন পরিস্থিতি তথা স্রষ্টার উপর বিশ্বাস করে সব আগের মত মেনেই নিয়েছে, প্রতিটি সিটে যখন যাত্রী বসানো হচ্ছে, মানুষ যেহেতু দাঁড়িয়ে ঝুলিয়ে নেয়া হচ্ছে তাহলে কেন গাড়ির ভাড়াটা আগের মত নেয়া হচ্ছে না?, কেন ভাড়াটা ডাবল নেয়া হচ্ছে?, কেন জিইসি থেকে বালুচড়া ভাড়া গুণতে হচ্ছে ১৫-২০ টাকা?, তাও আবার সরকারি বাসেই। কারা করছে এসব?, আমরা কার কাছে বিচার চাইতে যাবো?

আমাদের টাকা কি গাছে ধরে?। আমাদের কাছেতো সাহেদ আর সাবরিনার মত অবৈধ টাকা নেই!, আমাদের কষ্টের টাকা এভাবে কেড়ে নিবেন না! প্রতিটি টাকা অনেক কষ্টের বিনিময়ে ইনকাম করতে হচ্ছে!। আমাদের উপর দয়া করুন। যারা বিলাসবহুল গাড়ি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসে এসব নিয়মনীতি তৈরি করছেন তারা একবার রাস্তায় নেমে দেখুন, অন্তত একবার হলেও নিজেদেরকে আমাদের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখুন!। দয়া করুন আমাদের উপর। আমাদের রক্তে ঘামে ভিজানো টাকা এভাবে কেড়ে নিতে দিবেন না।’

এরআগেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী বোঝাই বাসের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন আরও এক যাত্রী।
এতকিছুর পরেও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নিজেদের সফল বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যসহ সড়ক আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে গত ১৫ দিনে প্রায় ৫ হাজার মামলা হয়েছে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, এটা আপনাদের পর্যবেক্ষণ বলছে। আমাদের নয়। তবুও আমরা নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট