চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

২০ কোটি টাকায় প্রাসাদোপম বাড়ি গ্রামে

যেভাবে শত কোটি টাকার মালিক হলেন আজম খান

বিশ্বজিৎ রাহা, ফটিকছড়ি

১৬ জুলাই, ২০২০ | ২:২৯ অপরাহ্ণ

ফটিকছড়ির ওসমান বাহিনীর অন্যতম সদস্য আজম খান। এ দলের সদস্য থাকাকালীন চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি হত্যা অপহরণ এমন কোন অপরাধ নেই যা সে করেনি। ২০০১ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে। নানুপুর এলাকার ছাত্রলীগ নেতা কামাল উদ্দিনকে জবাই করে হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে ফটিকছড়ি থানায় অন্তত ৫টি হত্যা মামলা হয়। ফটিকছড়ি থানা ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলায় তিন বছরের সাজা হয়। এ ছাড়া ২০০৭ সালে অপর একটি মামলার তার ৫ বছরের সাজা হয়। ওসমান বাহিনীর যাবতীয় অস্ত্র থাকতো এই আজম খানের জিম্মায়। এখনো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। ২০০৩ সালে ওসমান বাহিনীর প্রধান ওসমান র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হবার পর র‌্যাব পুলিশের তাড়ার মুখে আজম খান গোপনে বিদেশে পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে সে আস্তে আস্তে নারী পাচার ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়।

জানা গেছে বর্তমানে আজম খানের দুবাই শহরে চার তারকা বিশিষ্ট তিনটি এবং তিন তারকা বিশিষ্ট একটিসহ মোট চারটি হোটেল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ফরচুন পার্ল হোটেল এন্ড ডান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড, ও হোটেল সিটি টাওয়ার। এসব হোটেলে সে সারা দেশে নিযুক্ত দালালের মাধ্যমে অন্তত সহস্রাধিক নারী সেখানে পাচার করেছে। এছাড়া ওমানেও একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সে নিয়মিত নারী পাচারের সাথে যুক্ত ছিল বলে জানা যায়। এদিকে উক্ত আজম খান রীতিমতো দেশে আসতো এবং কিছু দান খয়রাতও করতো বলে স্থানীয়রা জানান। ফটিকছড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেরি মুহুরির বাড়ির মাহাবুব আলমের ছেলে উক্ত আজম খানের সাথে দুবাইতে তার ওপর দুই ভাইও তার এসব ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। তার গ্রামের বাড়িতে গেলে প্রতিবেশীরা জানান প্রায় বিশ কোটি টাকা খরচ করে সে গ্রামে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করেছে। কিন্তু তার প্রতিবেশীরা জানে সে দুবাইতে ফ্রুটের ব্যবসা করে। গত কয়েক বছর আগে আজম খান নিজ উদ্যোগে জিয়া আদর্শ একাডেমি নামে একটি সংগঠন তৈরি করে এবং সে নিজেই এ সংগঠনের সভাপতি হয়।

এ সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকায় বিভিন্ন সভা সমবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রামের ডা. শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখের সাথে আজম খানের একাধিক ছবি বর্তমানে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অহরহ দেখা যাচ্ছে।

আজম খান সম্পর্কে ফটিকছড়ি থানার ওসি বাবুল আক্তারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন উক্ত আজম খান ঢাকায় গ্রেপ্তার হবার খবর জেনেছি, তবে তার নামে বর্তমানে ফটিকছড়ি থানায় কোন মামলা তদন্তাধীন নেই। যে সব মামলা রয়েছে সে সব আদালতে বিচারাধীন বলে তিনি জানান। আজম খানের গ্রেপ্তারের ঘটনা সারা ফটিকছড়িতে মানুষের মুখে মুখে চাউর হতে দেখা যাচ্ছে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট