চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় ভিন্নচিত্র

এবার মধ্যবিত্ত পরিবারে নেই কোরবানির প্রস্তুতি

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৪ জুলাই, ২০২০ | ৩:১১ অপরাহ্ণ

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি ঈদুল আজহা। তবে প্রতি বছরের এই ঈদের চিত্র আর এবারের চিত্র যেন আকাশ পাতাল তফাৎ। কারো মধ্যে যেন নেই কোনো উচ্ছ্বাস। নেই কোনো প্রস্তুতি। এদিকে দেখতে দেখতে খুব কাছেই চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতরের পরপরই অনেক ঘরে চলে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি। চলে নানা জল্পনা কল্পনা। এই যেমন এবারে গরু, ছাগল, মহিষ কি কোরবানি করবে, কত টাকায় কোরবানি করা হবে বাজেট অনুযায়ী টাকা জমানো, মসলাপাতি কেনা আর সেগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করার মত নানান প্রস্তুতি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে এবারের সেই চিরচেনা ব্যস্ততা এবার নেই। প্রতিবছর কোরবানি করতো এমন অনেক পরিবারে নেই কোনো সাড়া শব্দ। নেই কোরবানির প্রস্তুতি। তাই এবারের ঈদ নিয়ে কি ভাবছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সেসব মানুষ? করোনাকালিন এসময়ে এবারের কোরবানি নিয়ে কথা হয় শহরের কিছু স্থানীয় ও অস্থায়ী বাসিন্দার সাথে। যারা প্রতি বছরই পালন করতেন ঈদুল আজহা। এদের মধ্যে কোরবানি পালন করা প্রায় ৯০ ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারেই এবার নেই কোন প্রস্তুতি। কারণ বৈশ্বিক এ মহামারীতে অনেকেই চাকরি হারা অবস্থায় আছেন। দীর্ঘদিন বেকার হয়ে থাকায় জমানো টাকা ভেঙে খেয়েছেন তারা। অনেকে কোরবানির ঈদ পালন করতে গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যান। এবারে তাও পারছেন না অনেকে।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. আবু সুফিয়ান বলেন, বাবা বেঁচে থাকতে এক নামেই কোরবানি করতাম। বাবা চলে যাওয়ার পরে আমরা তিন ভাই আলাদা হয়ে যাই। পরবর্তীতে তিন ভাই মিলে ভাগে একটা গরু কোরবারি করতাম। আমার এক ভাই দেশের বাইরে থাকে, একজন ঢাকায় চাকরি করে আর আমি চট্টগ্রামে চাকরি করি। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের তিন ভাইয়েরই কাজ বন্ধ। যে সৌদিআরবে থাকে তারও দীর্ঘদিন কাজ নেই। এবার তিনিও কোরবানি করতে পারছেন না। প্রতি বছর দুই ঈদেই বাড়িতে যাই। দুই ভাইয়ের পরিবার রয়েছে গ্রামে। আত্মীয়-স্বজন সবাই রয়েছে। সবার সাথে ঈদ পালন করতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু এবারে রমজানের ঈদেও বাড়ি যেতে পারিনি আর এখনতো যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ হাতে টাকা নেই। কোরবান করতে পারছি না নিজের কাছে লজ্জাও লাগছে। আমার তিন মেয়ে, তারাও বড় হয়েছে। বাবা হিসেবে খুব খারাপ লাগছে সন্তানদের জন্য। এমনিতে অনেক দিন আয় রোজগার না থাকায় খুব অভাবে দিন কাটছে। আমি খুব ছোট একটা চাকরি করি। তার আয় দিয়ে আগে মোটামুটি সংসার চলতো। কিন্তু টানা বন্ধের কারণে জমানো কিছু টাকা ছিল তাও ভেঙে খেয়েছি। এখন ঘর ভাড়া দিয়ে যেখানে খেয়েপড়ে বাঁচা দায় হয়ে গেছে, সেখানে হাজার বিশেক টাকা দিয়ে কোরবানি করার কথা আপাতত ভাবছি না।

পশ্চিম বাকলিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল সিকদার মিলন বলেন, কখনো এমন হয়নি, আমি কোরবান করিনি। আমার বহদ্দারহাট কাপড়ের দোকান আছে। দীর্ঘদিন ধরেই আমি ব্যবসা করছি। কিন্তু এবারে করোনার কারণে আমাকে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। কোরবানি করার জন্য এখনো অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু মনে হচ্ছে না পারবো। নিজের কাছে খুব লজ্জা লাগছে। আত্মীয়-স্বজনরা কি বলবে এসব ভেবে ভেবেও অনেক খারাপ লাগছে। আমার দুই বোন বিয়ে হয়েছে। তাদের শশুর বাড়িতে ঈদের বাজার পাঠাতে হচ্ছে। কিন্তু এ দিয়েতো শেষ হয় না। আরো অনেক নিয়ম আছে আমাদের চট্টগ্রামের মানুষদের। কি করবো বুঝতে পারছি না। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না।

সৈয়দ আহমেদ নামের এ শিক্ষক বলেন, যেহেতু দেশের অবস্থা এখন ভালো নেই, তাই এবারে কোরবানির কথা ভাবছি না। গরু কিনতে কিংবা গরুর মাংসের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি আছে। তাই সব কিছু চিন্তা করে আর কোরবানির কথা ভাবছি না।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট