চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দাফন কাফন সৎকারে ওরাই স্বেচ্ছাসেবী

মানবতার ঝাণ্ডা উঁচিয়ে এগিয়ে চলেছে গাউছিয়া কমিটি

ইফতেখারুল ইসলাম

১৩ জুলাই, ২০২০ | ৪:৫৪ অপরাহ্ণ

করোনায় মৃত লাশ দাফনে প্রথম দিকে গাউছিয়া কমিটি কর্মীদের মাঝে ভীতি ছিল। এখন উৎসাহ কাজ করছে। সেবা দেয়ার জন্য তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত সংগঠনটির কোনো স্বেচ্ছাসেবী করোনায় আক্রান্ত হননি। ১১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে গাউছিয়া কমিটির কর্মীরা ৫৪৫টি লাশ দাফন করেছে। আর চট্টগ্রামে করেছে ৪০৭টি। একান্ত সাক্ষাতকালে গাউছিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও লাশ দাফন কাজের সমন্বয় কমিটির প্রধান এডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার এ কথা বলেন। করোনাকালে গাউছিয়া কমিটি চট্টগ্রাম ছাড়াও, পার্বত্য জেলা, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট মৌলভী বাজার, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারি, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, বগুড়া, পাবনা, সাতক্ষীরাসহ অন্তত ৫০টি জেলায় গাউছিয়া কমিটির কার্যক্রম চালাচ্ছে। গাউছিয়া কমিটির এই সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনাকালে এখন এ কাজে সবচেয়ে বেশি মানসিক শান্তি পাচ্ছি। সেটি হল অক্সিজেন সরবরাহ করা।

চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে প্রায় অর্ধশত। খবর পাওয়ার সাথে সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছি। তাতে অনেক সঙ্কটাপন্ন শ্বাসকষ্টের রোগী তাৎক্ষণিকভাবে উপকার পাচ্ছেন। করোনা মহামারীতে গাউছিয়া কমিটির কর্মকান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাউছিয়া কমিটির কর্মীরা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় সেবা দিচ্ছে। সম্পূর্ণ সওয়াবের উদ্দেশ্যেই তারা কাজটি করছেন। কিন্তু এই সেবা দিতে গিয়ে কিছু আর্থিক বিষয়ও চলে আসে। কারণ যে সব পিপিই এবং অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী কোন লাশ দাফনে একবার ব্যবহার হয় তা দ্বিতীয়বার ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচিত অন্তত তাদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করা। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছে। তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত সরকারের স্থানীয় উইংগুলোর। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আছে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র আছে। তারা যদি সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেন তাহলে সেবা প্রদান আরও সহজ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে গাউছিয়া কমিটি প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। নতুন নতুন কমিটি হচ্ছে। যেহেতু লাশ বাড়ছে তাই কর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে হচ্ছে। যার মধ্যে চট্টগ্রামে কর্মীর সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রামে দু’টি এমবুলেন্স আছে। একটি ভাড়া নেয়া হয়েছে। অপরটি আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যের প্রবাসীরা দিয়েছেন। ঢাকায় একটি এমবুলেন্স পেলে আমাদের কর্মীরা আরও বেশি কাজ করতে পারতো। এমবুলেন্স আর কোন জেলার কমিটির কাছে নেই। শুধুমাত্র চট্টগ্রামে আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাউছিয়া কমিটি একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন হলেও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এখানে কোন ধর্মীয় বিভেদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধসহ যেই ধর্মের লোকের কাছ থেকেই সহায়তার আহবান আসুক না কেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিচ্ছি।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ১১ জুন রাঙ্গুনিয়ায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান সুব্রত বিকাশ বড়ুয়া (৬৭) নামের এক বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের পক্ষ থেকে গাউসিয়া কমিটির সহযোগিতা চাওয়া হয়। লাশ এম্বুলেন্স থেকে নামানো, গোসল দেয়া থেকে শুরু করে শেষকৃত্যের সব কাজ করেন এই সংগঠনের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া শাখার কর্মীরা। ধর্মবর্ণের ভেদাভেদ ভুলে এভাবে দিনরাত করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকারে ছুটে চলেন তারা।

এডভোকেট বখতেয়ার বলেন, করোনাকালের সবচেয়ে বড় আতংক ছিল করোনায় মৃতদেহ গোসল-কাফন-জানাজা-দাফনের কাজটি। কারণ বিশ্বময় এই মহামারিতে দুনিয়ার দেশে দেশে করোনায় মৃতদের প্রতি যে অবমাননা হয়েছিল, সন্তান তার পিতামাতাকে পর্যন্ত ঘরে বা ঝোপজঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিলো। এ দুঃখজনক খবর করোনার চেয়েও বেশি আতংক নিয়ে আসার পাশাপাশি ভূলুন্ঠিত হচ্ছিলো মানবতা। তখনই গাউছিয়া কমিটি লাশ দাফনে এগিয়ে আসার ঘোষণা দেয়। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সেবা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন পরিধি বাড়ছে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট