চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

কর্ণফুলীর তীরে ‘কোরাল’ বিপ্লব

মিঠা পানির কোরাল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে উদ্যমী ৬ নারী-পুরুষ

মোহাম্মদ আলী

১৩ জুলাই, ২০২০ | ১:৫৯ অপরাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর বুকে চর পড়েছিল প্রায় শত বছর আগে। সেই চরে পরিত্যক্ত জমিতে একটি পাকা ভবনও তৈরি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অর্ধশত বছর আগে কর্ণফুলী নদীর তীরে জাহাজ ভিড়িয়ে নাবিকেরা সেই ভবনে বিশ্রাম নিতেন। কালের আবর্তে সেই ভবনটিও এক সময় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ভবনের আশপাশে রয়েছে প্রায় ৪০ একর জমি। চরের কারণে মানুষ যাওয়া দূরের কথা, গরু-ছাগল যেতো না এ চরে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে এ চরে বিভিন্ন সময়ে নিরাপদ আশ্রয় নিতো জলদস্যু কিংবা ডাকাতেরা। সেখানে সংঘটিত হতো বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডও। বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে থাকা সেই চর নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন রাউজানের ৬ নারী-পুরুষ। বন্দর থেকে লিজ নিয়ে তারা ঘটিয়েছেন কোরাল মাছের বিপ্লব। এছাড়াও আরও বিভিন্ন মৎস্য চাষের কারণে পরিত্যক্ত চরটি খুলে দিচ্ছে আগামী দিনের স্বপ্ন দুয়ার।

লুসাই দূহিতা কর্ণফুলী ও রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর মোহনায় এ চরের অবস্থান। রাউজানের সর্ব দক্ষিণে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন গ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরে এ চরটি এখন আর পরিত্যক্ত নয়। মানুষের হাতের ছোঁয়ায় খুলেছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। প্রায় ৪০ একর জমিতে ৯টি বিশাল বিশাল পুকুর খনন করে চাষাবাদ হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতি মাছের। এর মধ্যে মিঠা পানির কোরাল মাছের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে উদ্যমী ৬ নারী-পুরুষ। শোল, হলদা চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ হরেক প্রজাতির চাষ হয় এ হ্যাচারিতে। হ্যাচারিটির নাম ‘বারাকা এগ্রো ফার্ম’। নাজিম উদ্দিন, আসিফ খান, সুমন দে, সিরাজ-উদ দৌল্লাহ, বাবুল মিয়া ও শাকিরা সুলতানা এ ফার্মের স্বপ্ন দ্রষ্টা।

ফার্মের অন্যতম উদ্যোক্তা সুমন দে দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রায় শত বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কর্ণফুলী ও হালদার মোহনায় জেগে উঠা চরটি। দুর্গম যোগাযোগের কারণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কেউ এ চরটি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করেনি। এ কারণে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় এটি। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লিজ নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে এটি নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ি। ৯টি বিশাল পুকুর খনন করে নানা জাতের মৎস্য চাষ শুরু করি। এ পর্যন্ত হ্যাচারিতে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে আমাদের আশা জাগাচ্ছে মিঠা পানির ‘কোরাল মাছ’। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি কোরাল মাছের ওজন হয়েছে ৪ থেকে ৫ কেজি। আগামী ডিসেম্বরে এগুলো বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হবে। এছাড়া শোল, গলদা চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ হরেক প্রজাতির চাষ হচ্ছে এ হ্যাচারিতে। সবগুলো মাছ এখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এগুলো বাজারজাত করা হবে।’

সুমন দে বলেন, এ হ্যাচারিতে মৎস্য চাষের পাশাপাশি কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। প্রতিটি পুকুর পাড়ে পরিকল্পিতভাবে আম্রপালি, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে ও সবজি চাষ করা হবে। এ ছাড়াও লালনপালন করা হবে মহিষ ও ছাগলের। সব মিলে এ হ্যাচারিকে ঘিরে আমাদের বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে তা বাস্তবে রূপ দেয়া হবে।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট