চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গরু নিয়ে আসছে বেপারিরা

কোরবানিতে পশুর সংকট থাকবে না : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ জুলাই, ২০২০ | ৪:২৯ অপরাহ্ণ

সাগরিকা গরু বাজারের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ শেডে গরুর জন্য খাবার তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কুমিল্লার রহিম মিয়া ও রাজশাহীর কামাল উদ্দিন। তারা সারাবছরই এখানে কাজ করেন। রহিম মিয়া বলেন, সারাবছরই আমরা এখানে গরু বিক্রি করি। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবারও শতাধিক গরু আসছে তাদের। তাই হাট-বাজারের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন তারা।

রহিম মিয়া বলেন, সারা বছর চট্টগ্রামে গরু আনেন। বিক্রি করেন। কোরবানির ঈদে বেচাকেনা বেশি হয়। তিনি বলেন, কৃত্রিম উপায়ে নয়, প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালন-পালন করে বিক্রি করেন। এছাড়াও কোরবানি উপলক্ষে পাড়া-গাঁ থেকে গরু কিনে চট্টগ্রামে আনেন।

বেপারি আবদুল হান্নান (৬৫) বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানির আগেই ভারত থেকে গরু আমদানি কমে যাওয়ার অজুহাতে গরুর দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা টেনে তিনি বলেন, কোরবানের ১৫-২০ দিন আগে সব ঠিক হয়ে যায়। গরু আসছে। এতে দাম বাড়ার বা কোরবানির পশু সংকটের দুশ্চিন্তার কিছুই নেই।

এই বেপারি আরও বলেন, কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশেও প্রচুর গরুর খামার গড়ে উঠেছে। লাভজনক হওয়ায় মানুষ এখন গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন। উত্তরবঙ্গ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা, জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, পশ্চিম পটিয়া, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গরুর খামার ও গরু পালন করা হয়। তাছাড়া মিয়ানমার, নেপাল থেকে কোরবানির আগে প্রচুর গরু আমদানি হয়। প্রতি বছর কোরবানি ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল থেকে গরু আমদানি করা হয়। আগে প্রয়োজন ছিল। এখন আর নেই। ধীরে ধীরে দেশে গরু লালন-পালন বাড়ছে। এখন দেশীয় উৎপাদন দিয়ে কোরবানির ঈদ করা সম্ভব। তাই এবার সরকার ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। তবে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গরু আমদানি বাড়ছে। এছাড়াও বান্দরবান, টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অবৈধভাবেও মিয়ানমার থেকে গরু আসছে।
আসাম স্টেট হোম ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে চোরাইপথে বাংলাদেশে পাচারকালে এক লাখ এক হাজার ৩৮১টি গরু আটক করা হয়। ২০১১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৩৫ হাজার ২৯১-এ। এছাড়াও ২০১২ সালে এক লাখ ২০ হাজার ৭২৪টি গরু আটক করে দেশটির সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এবার গরু আমদানি কমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবচেয়ে বেশি গরু আমদানি হয় সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর ৭ লাখ ২০ হাজার ৭৮৯টি পশু জবেহ করা হয়েছে কোরবানিতে। চলতি বছর কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার। প্রতি বছর ৫-৭ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এবার করোনা সংক্রমণের কারণে অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি। কারণ কোরবানিদাতার সংখ্যা এবার তেমন বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা যাচ্ছে বিধায় বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি বলে দাবি প্রাণিসম্পদ বিভাগের।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম বলেন, চলতি বছর চট্টগ্রামে গরু উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি। এছাড়াও কোরবানিতে অনেক গরু আশপাশ এলাকা বা অন্যান্য জেলা থেকে আনা হয়। সবমিলে কোরবানিতে পশুর সংকট হবে না।

নগরীর বড় গরুর বাজার সাগরিকা ও বিবিরহাটে এখনো গরুবাহী ট্রাক দেখা যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে গরু আসছে। তবে বিভিন্ন জেলার বেপারিরা হাট-বাজার ঘুরে যাচ্ছে বলে জানায় ইজারাদাররা। বেপারিরা জানান, এই বাজারে সারা বছর গরু-মহিষ বেচাকেনা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলার বেপারিরা এখানে স্থায়ীভাবে গরু-মহিষ বিক্রি করেন। কোরবানি উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়। এই বাজারে কোরবানির জন্য বাঁশ, টিন দিয়ে শেড তৈরিরও প্রস্তুতি চলছে।
একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে গত দুই বছরে লোকসান গুনতে হয়েছে। গত কোরবানিতেও একদিন আগে হাট থেকে ফিরিয়ে নিতে হয়েছে গরু। পরে সেই গরু কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। তারা বলেন, খইল-ভূসি, ঘাস আর ভাত-মাড় খাইয়ে গরু মোটতাজা করা যায়। পশু চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। তবে ক্রেতাদের কাছে এই গরুর কদর কমে যায়। ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে কোরবানির গরু বেশি মোটাতাজাকরণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন গরু বেপারিরা।

গরু ব্যবসায়ী সমিতির মো. শাহজাহান জানান, ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রতিবছর কয়েক লাখ গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কয়েক বছর ধরে তা অনেকটা বন্ধ রয়েছে। দেশীয় উৎপাদন দিয়ে এখন কোরবানি দেওয়া সম্ভব। দেশে খামারের সংখ্যা বাড়ছে। গরু উৎপাদন বাড়ছে। ন্যায্য দাম পেলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট