চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সমঝোতায় ফিরে ঐক্যের বার্তা দিলেন আল্লামা শফী-বাবুনগরী ও আনাস

সমঝোতায় ফিরে ঐক্যের বার্তা দিলেন আল্লামা শফী-বাবুনগরী ও আনাস

হাটহাজারী সংবাদদাতা

১০ জুলাই, ২০২০ | ১১:১১ অপরাহ্ণ

দূরত্ব ভুলে এবার হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর উপস্থিতিতে এক টেবিলে বসলেন সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক এবং আমিরপুত্র আনাস মাদানী।

সাম্প্রতিক সময়ে আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার (হাটহাজারী মাদ্রাসা) মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ায় মাদ্রাসার মোহতামিম ও মুঈনে মুহতামিম নিয়োগসহ হেফাজতের নানা ইস্যু নিয়ে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ।

এর মধ্যে শূরা কমিটির মাধ্যমে মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শেখ আহমদকে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ফলে হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতার স্নায়ুযুদ্ধ একপর্যায়ে প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

এছাড়া হেফাজত আমিরের পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। এরপর হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতির মাধ্যমে মুখ খুলতে শুরু করে।

বিবৃতিতে উভয়ে হেফাজত ট্র্যাজেডির জন্য একে অপরকে বিরূপ মন্তব্য করে দোষারূপ করেন। এ নিয়ে মিডিয়াপাড়া ও ফেসবুক-ইউটিউবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বেশ সরব ছিল। তবে গত বুধবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রায় ২০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

ভিডিওবার্তায় হেফাজত আমীর ও মহাসচিবের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আল্লামা শফী পুত্র আনাস মাদানী। এ সময় জুনায়েদ বাবুনগরী আনাস মাদানীকে ভাই হিসেবে সম্বোধন করেন।

লিখিত বক্তব্যে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আজ বুধবার বাদ মাগরিব আমি ওলামায়ে কেরাম এবং দেশবাসীর সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার করার জন্য উপস্থিত হয়েছি। আশা করছি আমাদের এই লাইভে আপনাদের অনেক জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়ে যাবেন। গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে যারা বুঝে না বুঝে অহেতুক লেখালেখি করে আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরির আভাস দিচ্ছেন, কাল্পনিক মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে পক্ষ বিপক্ষ তৈরির পাঁয়তারা করছেন, তারা আসলেই ভুল করছেন। আমাদের মাঝে কোনও দূরত্ব নেই। আমরা সবাই হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক হযরতের রুহানি সন্তান। হযরতের হাতে গড়া বাগানের ফসল। আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে সফল হবেন না, সফল হতে দিবো না ইনশাআল্লাহ। যে বা যারা আমাদের ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অহেতুক লেখালেখি করছেন তারা নিজেদের আখেরাতের কামাই নষ্ট করতে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমি আজকের এই লাইভ থেকে আপনাদের সতর্ক করতে চাই, আপনারা থামুন। আজকের পর থেকে ভুল বিভ্রান্তিমূলক লেখালেখি ও প্রচারণা বন্ধ করুন। আপনারা আমাদের ভাই, বন্ধু। আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি থেকে ফিরে আসুন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করুন।

প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা, হাটহাজারী মাদ্রাসার হযরত আমাদের জন্য নেয়ামতে ওজমা। আমাদের মাথার ছায়া, মুকুটহীন সম্রাট। হুজুরের শেষ অবস্থায় আমরা যারা হুজুরের মনে কষ্ট দেবো, তারা আল্লাহর ওলির সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। হুজুরের পরিবার আমাদের চরম শ্রদ্ধার পাত্র। প্রিয় ছোট ভাই আনাস এবং আমার মাঝে কোনও বিভেদ নেই। এক ঘরের মধ্যে যেমন ভুল হয়ে গেলে সবাই বসে এর সমাধান করে ফেলে তেমন আমাদের মাঝেও ভুল বুঝাবুঝি আমরাই সমাধান করে নেবো। আমাদের মুরুব্বি আছেন। উনারা আমাদের সংশোধন করে দেবেন। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ সকল কওমি মাদ্রাসার পাশে থাকবেন। এসব কওমি মাদ্রাসার ঈমান আকিদা রক্ষার জন্য আমাদের মুরুব্বিরা না খেয়ে, না পরে উপবাস থেকে দ্বীন রক্ষার জন্য ইসলামের কিল্লা স্বরূপ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আপনারা যারা আলেম ওলামা ইসলামকে ভালোবাসেন তারা মাদ্রাসায় সহযোগিতা করে যাবেন। এই মাদ্রাসা বেঁচে থাকলে আমাদের ঈমান ও আমলের হেফাজত হবে।

অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীও লিখিত বক্তব্যে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রিয় দেশবাসী ও আমার স্নেহের ছাত্রবৃন্দ। আপনাদের সবার দোয়ায় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আপনাদের ও মুরুব্বিদের আমানত হিসেবে বেঁচে আছি। কিছুদিন যাবত হাটহাজারী মাদ্রাসার কিছু ঘটনা প্রবাহ, তিলকে তাল করেছেন। ভুল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। দলাদলি করার পাঁয়তারা করতেছেন। আমি সবাইকে বলতে চাই, আপনারা বিনা তাহকিকে এইসবে কান দেবেন না, কোনও শৃঙ্খলা নষ্ট করবেন না। মাদ্রাসায় শান্ত পরিবেশ আছে। আপনারা আগের মতো মাদ্রাসায় সহযোগিতা করে যাবেন। আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমাদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই। সবাই দোয়া করবেন। আমি আপনাদের জন্য দোয়া করিতেছি। এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ইসলামের পতাকাবাহী একটি সংগঠন। ইসলাম রক্ষায় আগের মতো দেশবাসীকে সাথে নিয়ে কাজ করবে। এখানে কোনও গ্রুপিং নেই। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিবসহ সবাই স্ব স্ব পদে বহাল আছেন। শাপলা চত্বরে আন্দোলনসহ আপনারা যা শুনতেছেন এগুলো অপপ্রচার মাত্র। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন বিশেষ কোনও দল বা গোষ্ঠীর ব্যাপারে কখনও ছিল না। হেফাজত আগের মতোই আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।

এই সমঝোতা সরকারের ইশারায় হয়েছে দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, মূলত আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে তার ভক্ত-অনুরাগীদের থেকে আলাদা আরও কোণঠাসা করার লক্ষ্যে এই সমঝোতা নাটক সাজানো হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে আল্লামা শফী ও তার পুত্র আনাস মাদানীকে দেশের আপামর জনসাধারণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজেদের পড়তি ইমেজ ঠেকাতে বাবুনগরীর সাথে এই লোক দেখানো সমঝোতা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিলনা।

এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী উপজেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা হলো কওমী মাদ্রাসাসমূহের জননী। এখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সারা দেশের কওমী মাদ্রাসাসমূহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। কওমী মাদ্রাসা সমূহের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে মুঈনে মুহতামিমের পদ হারানো ও জামায়াত সম্পৃক্ততার অপবাদ দেয়ার পরও আল্লামা বাবুনগরী ক্ষমার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে।

দুই নেতার আপোষে উচ্ছাস প্রকাশ করে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির বলেন, আমাদের দুই মুরুব্বির ঐক্যে তৌহিদী জনতার মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমাদের রাহবাদ্বয় ঘরের সমস্যা ঘরেই সমাধানের যে সুন্দর পন্থা আমাদের দেখালেন তা ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদীনের সেই সোনালী যুগকেই যেন স্মরণ করিয়ে দিল।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/জাহাঙ্গীর-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট