চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫৮ কোটি টাকার সড়কে ১০ মাসে ১৮ শতাংশ কাজ

ইয়াংছা-মানিকপুর-কাকারা-শান্তিবাজার’ সড়ক নির্মাণে শ্লথগতি, দুর্ভোগে বাড়ছে ক্ষোভ

চকরিয়া-পেকুয়া সংবাদদাতা

১০ জুলাই, ২০২০ | ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

‘ইয়াংছা-মানিকপুর-কাকারা-শান্তিবাজার’ সড়ক নির্মাণে অতি শ্লথগতির কারণে টানা দুর্ভোগ পোহাতে হওয়ায় জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ। কক্সবাজারের চকরিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নির্মাণকাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগও উঠেছে। ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দে সড়কটি নির্মাণ শুরুর ১০ মাসে অফিসিয়ালি কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ। যদিও সেই অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন আছে। আর ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মধ্যে এক মিটার সড়কও কার্পেটিং বা সিসি ঢালাই হয়নি এখনো । কাজের ধীরগতি ছাড়াও সড়কটি ডিজাইন অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে না-এমন অভিযোগ উঠেছে ।

নির্মাণকাজের উত্তম সময় শুকনো মৌসুমে কাজের গতি দ্রুত থাকার কথা থাকলেও একমাস রাস্তার কিছু কিছু অংশ খুঁড়ে মাঝপথে রেখে রহস্যজনক কারণে উধাও হয়েছিল ঠিকাদার। এতে নিজেদের দায় এড়াতে খোদ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঠিকাদারকে শোকজ পর্যন্ত করেছিল। এখন বর্ষার সময়ে আবারও খোঁড়াখুড়ি চালাচ্ছে। এই অবস্থায় কয়েকদফা বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই ছিন্নভিন্ন এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে লাখো জনগণের চরম দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে । চলতি বর্ষায় এক পাহাড়ি ঢল নামলেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে জনগণের মনে।

উল্লেখ্য, চকরিয়া উপজেলা সদরের সাথে চারটি ইউনিয়ন বরইতলী, লক্ষারচর, কাকারা এবং সুরাজপুর-মানিকপুর এবং পার্বত্য দুই উপজেলা লামা ও আলীকদমের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি নির্মাণ করছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সড়কটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও রহস্যজনক কারণে নির্মাণকাজে দেরি করে এলাকাবাসীকে ক্ষেপিয়ে তুলছে ঠিকাদার আরএবি আরসি প্রাইভেট লিমিটেড। এর আগেও উদ্বোধনের পর নির্মাণকাজ শুরু না করায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল।

ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কাকারা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ বলেন, ‘গতবছর কাকারায় কাজ শুরুর পরে ঠিকাদার এই অংশের কাজ হঠাৎ বন্ধ রেখে পাহাড়ি এলাকার অংশে কাজ শুরু করেছে। ফলে এখন বর্ষা মৌসুমে এখানে এসে আবারও সড়ক খোঁড়াখুড়ির কাজ শুরু করায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারণ জনগণ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, ‘মাননীয় এমপি জাফর আলমের চেষ্টায় বিপুল টাকা ব্যয় করে এই সড়ক নির্মাণ করছে সরকার। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার পরও প্রত্যাশিত গতিতে কাজ না হওয়ায় আমাদেরকেই দোষারোপ করছে জনগণ। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ দ্রুত শেষ করার জনদাবিকেও গুরুত্ব দেয়নি ঠিকাদার। এখন বর্ষায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ’

প্রকল্প অনুযায়ী, বর্তমানে কাকারা অংশের সড়কটি ১০ ফুট প্রস্থ। একে বাড়িয়ে ১৮ ফুট প্রস্থ করা হবে। এর বাইরে থাকবে চারফুট মাটির অংশ। কিন্তু ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির জিদ্দাবাজার থেকে টোবাকো অফিস পর্যন্ত ৪৫০ মিটার অংশ উঁচু করে এবং পাথরের খোয়া দেয়া শেষ হয়েছে চারমাস আগে। এরপর আর কাজ এগোয়নি। এই সড়কের অনেক স্থানে নির্ধারিত ১৮ ফুট প্রস্থ নেই। কারও বাড়ির দেয়াল ভাঙা হয়নি, স্কুল-মসজিদের কোনা ভাঙা হয়নি। শুধু তাই নয়, সড়কের এই অংশে দুটি কালভার্ট আছে যেগুলোর প্রস্থ ১০ ফুট। কালভার্ট দুটিকে বড় করে ১৮ ফুট প্রস্থে করার সিদ্ধান্ত হলেও এখনও অনুমোদন মিলেনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে পরিমাণ কাজের অগ্রগতি হওয়ার কথা তা হয়নি এবং ঠিকাদারের পারফরম্যান্সে আমরাও সন্তুষ্ট নই। কিন্তু লকডাউনের কারণেও খুব বেশি চাপও দেয়া যায়নি। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত কাজ করাতে।’

কিন্তু জনবসতি এলাকায় কাজ না করে পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ওটা টেকনিক্যাল এবং ঠিকাদারের বিষয়।

প্রকল্পে কাজের বিপরিতে কতটাকা ছাড় হয়েছে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাজের চেয়েও কম টাকা ছাড় করা হয়েছে। তাদের কাজের পারফরমেন্সে আমরাও সন্তুষ্ট নই। তবে এখন থেকে কাজের গতি দ্রুত করার কথা বলব। আর আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ শুরুর জোর তাগাদা দেব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আরএবিআরসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আশরাফুল আলম আবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনাকালীন দুর্যোগ, সেই সময়ে উপকরণ সরবরাহ সংকট, আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। একইসাথে কত কিলোমিটার সড়ক সিসি ঢালাই এবং কত কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখানে ইচ্ছেকৃত ধীরগতির সুযোগ নেই।’

ইয়াংছা অংশে কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাকারা অংশে ভালো মাটি সরবরাহ না পাওয়ায় শেষপ্রান্তে কাজ করতে গিয়েছিলাম। এখন সেখানেও কাজ করতে গিয়ে আরও জটিলতায় পড়েছি। বনভূমির একটি অংশ অধিগ্রহণ করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘১৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সবচে বেশি দুই লেয়ারের কাজ হয়েছে তিন কিলোমিটারে। সড়কের বাকি অনেক অংশে প্রস্থ করার কাজ শেষ দিকে। আগামী একমাসের মধ্যে কাজের বড় অগগ্রতি এবং দৃশ্যমান হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট