চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৬১ শতাংশেরই মৃত্যু ৩৭ দিনে,৭ দিনে ২৬ জনের

লাগাম টানা যাচ্ছে না আক্রান্তের

ইমাম হোসাইন রাজু

৯ জুলাই, ২০২০ | ৪:৩৩ অপরাহ্ণ

কোনভাবেই চট্টগ্রামে কমছে না করোনার দাপট। মৃত্যুও রয়েছে অব্যাহত। দিন গড়াতেই লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আর সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয় জেঁকে বসছে চট্টগ্রামের বুকে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নগরীতেই। যেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যু সমানতালেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও ছাড়িয়েছে দুইশ’। এরমধ্যে শুধুমাত্র গেল ৭ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এর আগের মাসে তথা জুন মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৯৯ জনের। অর্থাৎ গেল ৩৭ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ১২৫ জনের। যা মোট মৃত্যুর ৬১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

চট্টগ্রামে সংক্রমণ শনাক্তের প্রথম মাসে মৃত্যুর হার ছিল খুবই কম। পরবর্তী মাসেও জুন মাসের তুলনায় কম থাকলেও জুনেই তা বাড়তে শুরু করে। যা হিসেবে বর্তমানে জুনের চেয়ে বেড়েছে। অর্থাৎ জুনে প্রতিদিন মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু জুলাইয়ের হিসেবে গেল সাতদিনেই মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে সামনে মৃত্যুর হারও আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, গতকাল বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের। যাদের ৭১ শতাংশই নগরীর। বাকি ২৯ শতাংশ ১৪ উপজেলার। এরমধ্যে নগরীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে হালিশহর এলাকায়। সেখানে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা ১১ শতাংশের চেয়ে বেশি। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কোতোয়ালী। এই এলাকায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সীতাকু- ও হাটহাজারীতে। এদের মধ্যে সীতাকু-ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের আর হাটহাজারীতে ৯ জনের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুয়ায়ী প্রথম সংক্রমণের দেশ চীনে তিন মাসের মধ্যেই সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। দক্ষিণ কোরিয়াতেও নীচের দিকে নামতে শুরু করেছিল সংক্রমণের হার। কিন্তু তিন মাস পর বাংলাদেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এমন অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে আশঙ্কা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ শুরু থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে সংক্রমণ যেন ঠেকাতে পারে। আর সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি তো মানুষকে মানতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন দৃশ্যই ঠিক মতো চোখে পড়ছে না। সবাইকে বারবার সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসলেও সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি হলে সংক্রমণের হার তো বাড়বেই।’

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত আরও ২৯৫ জন:

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চট্টগ্রামে আরও ২৯৫ জনের শরীরের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্ত হওয়া এ ২৯৫ জনসহ চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭৭২ জনে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জন ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেছেন সর্বমোট ১ হাজার ২৭৯ জন। অপরদিকে, আক্রান্ত আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গেল ২৪ ঘণ্টায়। যা নিয়ে চট্টগ্রামের মৃত্যুর সংখ্যা ২০৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ৬টি ল্যাবে সর্বমোট ১ হাজার ৪৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে চট্টগ্রামের ২৯৫ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে। এদের মধ্যে ২১৬ জনেই নগরীর। অপর ৭৯ জন উপজেলার বাসিন্দা।

তথ্য মতে, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ল্যাবে ১৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তারমধ্যে চট্টগ্রামের ৫৬ জনের ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে ২৩ জন নগরীর, অপর ৩৩ জন উপজেলার বাসিন্দা। আর ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে সর্বমোট ২৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তারমধ্যে চট্টগ্রামের ১৩ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে। এদের মধ্যে ১১ জন নগরীর আর ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে পরীক্ষা হয় ৫৩৪ জনের নমুনা। তাতে ১১৫ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে। যাদের ৯৬ জনেই নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। অপর ১৯ জন উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে ২০৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের ২৮ জনের ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়। যাদের ১৩ জন নগরীর বিভিন্ন এলাকার। অপর ১৫ জন উপজেলার।
এছাড়া নগরীর বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় ১৯০ জনের নমুনা। এতে ৩৯ জনের ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়। যাদের ৩৭ জন নগরীর আর ২ জন উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে, বেসরকারি শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির ল্যাবে ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যাতে চট্টগ্রামের ৪৪ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে। তাদের ৩৬ জনেই নগরীর আর ৮ জন উপজেলার বাসিন্দা।

র্পূবকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট