চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মৌসুমী বেপারিরা হতাশ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৯ জুলাই, ২০২০ | ৪:২৭ অপরাহ্ণ

বিবিরহাট এলাকার গরু ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান। তিনি বিবিরহাট বাজার ইজারার সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। রয়েছে চামড়ার ব্যবসাও। তিনি বলেন, ৩৬ বছর ধরে গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এবার দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর ব্যবসাও ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে দেশে মন্দাভাব চলছে। তাই কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য এখনো গরু আনার মনস্থির করিনি।
বোয়ালখালী উপজেলার মৌসুমী গরু ব্যবসায়ী মো. আবদুল করিম। তিনি কয়েক বছর ধরে কোরবানির হাটে গরু বেচাকেনা করে আসছেন। গত বছর বিক্রির জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে ৩৬টি গরু এনেছিলেন। বিক্রি করেছেন হাট-বাজারে। এবার তিনিও গরুর ব্যবসা করছেন না। কারণ ঈদুল ফিতরের মতো মানুষের মধ্যে কোরবানিতে আগ্রহ কম। ব্যবসা মন্দা যেতে পারে, সেই দুশ্চিন্তায় এবার গরু ব্যবসা করছেন না তিনি।

শুধু শাহজাহান ও করিম নয়, শত শত মৌসুমী ব্যবসায়ী এখনো কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুতি নেয়নি। প্রতিবছর পাড়া-গাঁ থেকে শুরু করে নগরীর অলিগলিতে ঠাঁই করে নিত মৌসুমী ব্যবসায়ীদের গরুর হাট। বেচাকেনাও চলত পাড়া-মহল্লায়। কোরবানির ১৫-২০ দিন আগ থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু কিনে আনতো মৌসুমী বেপারিরা। চলতি মৌসুমে এখনো সেই পরিবেশ দেখা যায়নি। তবে বিভিন্নভাবে সীমিত আকারে গরু আসতে দেখা যায়।

জেলা প্রাণিসম্পদের হিসাব মতে, চলতি বছর কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৩১ হাজার। যা গত বছরের কোরবানিদাতার সংখ্যার কাছাকাছি। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন রয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার। সংকট থাকবে প্রায় ৪২ হাজার পশু। তা আশপাশ এলাকা থেকে চলে আসবে বলে জানায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম বলেন, প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ পশুর সংকট থাকে। এবার কিন্তু তা হচ্ছে না। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে কোরবানির চাহিদা অনেকটা মিটে যাবে।

মো. ফারুক। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কয়েক বছর কোরবানি উপলক্ষে গরু বেচাকেনা করেন। এবার ব্যবসা খুবই মন্দা যাচ্ছে। কোরবানির হাটে গরু বেচাকেনায় আগ্রহ নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ধার-দেনা করে ব্যবসা করতাম। এখন ধার দেনার লোক পাওয়া যাবে না। এছাড়াও ব্যবসা নিয়ে ঝুঁকি আছে বলেও মনে হচ্ছে। তাই ব্যবসা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মৌসুমী গরু ব্যবসায়ী আহমদ নবী বলেন, ‘পাড়া-গাঁ থেকে একটি-দুটি করে কিনে তা পরিচর্যা ও লালন-পালন করে কোরবানির হাটে বিক্রি করতাম। চলতি মৌসুমে কোরবানিতে পশু বিক্রির ইচ্ছে নেই।’ চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর বড় জোগান দেয় উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের কুষ্টিয়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলা।

গরু বেপারি মো. শাহজাহান বলেন, গরু পালনে কিছুটা লাভবান হওয়ায় স্থানীয় জাতের গরু উৎপাদনের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে কোরবানির পশু সংকটের দুশ্চিন্তাতার কোনো কারণ নেই। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমছে কোরবানির হাটে।

গরু ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর থেকে দেশে প্রচুর গরুর খামার গড়ে উঠেছে। লাভজনক হওয়ায় মানুষ এখন গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন। উত্তরবঙ্গ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা, জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, পশ্চিম পটিয়া, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনীয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গরুর খামার ও গরু পালন করার হার অনেক বেড়েছে।

র্পূবকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট