চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

করোনায় মানবতার মশাল জ্বালাচ্ছেন মনজুর আলম

মোহাম্মদ আলী

৮ জুলাই, ২০২০ | ২:১২ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ তিন দশক ধরে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। তাঁর পরিচালিত আলহাজ মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং নিজ অর্থায়নে বছরব্যাপী চলে ত্রাণ কার্যক্রম। যে কোন দুর্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সাবেক এ মেয়র। এর ধারাবাহিকতায় এবার গত মার্চ থেকে করোনা ভাইরাসের সংকটকালের শুরু থেকেই তিনি সরকারের পাশাপাশি নানাভাবে করোনা মোকাবেলায় সেবা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত আলাপে উঠে আসে তাঁর এই মানবিক কার্যক্রম। ধারাবাহিকভাবে তা তুলে ধরা হলো।

প্রাথমিক ত্রাণ কার্যক্রম : করোনার শুরুতে মনজুর আলম গরীব, দুঃখী, খেটে-খাওয়া কর্মহীন মানুষের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেন। প্রথম ধাপে বিতরণ করেন দশ হাজার পরিবারের মাঝে এসব সামগ্রী। এরপর রমজানে আরও চল্লিশ হাজার পরিবারের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পৌঁছে দেন সেহরি ও ইফতার সামগ্রী।

অক্সিজেন সরবরাহ : করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অক্সিজেন। নগরীর হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে এগিয়ে আসেন মনজুর আলম। চাহিদা অনুযায়ী তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন সরবরাহ করছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল, দামপাড়াস্থ পুলিশ লাইন হাসাপাতাল, বিভিন্ন ফিল্ড হাসপাতাল, আইসোলেশন সেন্টার এবং চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে ৫-১০টি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেন। পাশাপাশি সরবরাহ করা হচ্ছে সীতাকুণ্ড উপজেলাও। মোট ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে এ সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী সকল হাসপাতাল, ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের জন্য অক্সিজেন ফ্রি রিফিল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। একবার-দুইবার নয়, রোগীর যতবার প্রয়োজন ততবার দেয়া হচ্ছে এ অক্সিজেন।

এছাড়াও হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসক ও গণমানুষের মাঝে জীবন রক্ষার জন্য পিপিই ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য খাদ্য প্রদান করা হয়েছে।

সনাতন সম্প্রদায়ের পাশে : করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের মৃতদেহ দাহ করার জন্য উত্তর কাট্টলীর নির্ধারিত শ্মশানটিতে ছিল নানা সমস্যা। উত্তর কাট্টলীতে গত ১৭ বছর আগে নির্মিত উত্তর কাট্টলী সনদ দত্ত মহাশ্মশানের যাতায়াতের রাস্তাটি ছিল অনেকটা অনুপযোগী। মনজুর আলমের উদ্যোগে মানুষের চলাচল সুবিধার্থে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করে এক কিলোমিটার সড়কটি সংস্কার করা হয়। বর্তমানে শ্মশানটিতে স্বেচ্ছাসেবকরা দৈনিক ৩/৪টি মৃতদেহ সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার-বিধান অনুযায়ী নিয়মিত সৎকার করছেন। ২০০৩ সালে এ শ্মশানে শুরুতেও সহায়তা করছিলেন মনজুর আলম।

লকডাউন চলাকালীন : ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন চলাকালীন সময়ে মানুষের পাশে ছিলেন মনজুর আলম। ওয়ার্ডে প্রতিদিন এক হাজার মানুষের মাঝে তিনি খাবার প্যাকেট বিতরণ করেন। এভাবে টানা দশদিন দশ হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জায়গায় সহায়তা : সরকারি, বেসরকারি, সামাজিক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনসহ করোনাকালীন সময়ে সকলের পাশে ছিলেন মনজুর আলম। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। বগুড়া, জামালপুর, শেরপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, খাগড়াছড়ি শহর হতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার অসহায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় পঞ্চাশ হাজার পরিবারে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

সেহরি ও ইফতারির প্যাকেট বিতরণ : করোনার প্রাদুর্ভাবে আলহাজ মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ উদ্যোগে পহেলা রমজান থেকে ৩০ রমজান পযর্ন্ত প্রতিদিন পথচারী ও বস্তিবাসী দুস্থ রোজাদারের মাঝে এক হাজার সেহরির প্যাকেট ও ৬০০ ইফতারির প্যাকেট মিনারেল ওয়াটারসহ বিতরণ করা হয়। ৩০ রমজান পযর্ন্ত এভাবে মোট ৫০ হাজার সেহরি ও ইফতারির প্যাকেট বিতরণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলহাজ মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলম বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি চলাকালীন সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে গরিব, দুঃখী, খেটে-খাওয়া মানুষ। এ সময় আমরা ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এছাড়া করোনা রোগীর জীবন বাঁচাতে গুরুত্ব্পূর্ণ হচ্ছে অক্সিজেন। চট্টগ্রামে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যা আমাকে খুব ব্যথিত করেছে। তাই আমরা বিনামূল্যে সকল করোনা রোগীর জন্য এই অক্সিজেন প্রদান অব্যাহত রেখেছি। করোনার এ সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলে আমাদের মানবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট